সরকারি চাকরিজীবীদের টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড নিয়ে বিভ্রান্তি

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল থাকছে না বাদ পড়ছে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের বিভ্রান্তি। অষ্টম জাতীয় পে-কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ দুই সুবিধা বাদ দিয়েই বেতন স্কেল চূড়ান্ত করে সচিব কমিটি। যেটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়। পরে এ দুই সুবিধার একটি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এ ঘোষণার কিছুদিন পর আবার তিনি বলেন, দুই সুবিধাই বহাল রাখার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। আর এ জটিলতার কারণেই মন্ত্রিসভায় নতুন বেতন স্কেল অনুমোদনের পর আড়াই মাসের বেশি চলে গেলেও অদ্যাবধি জারি হয়নি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডসংক্রান্ত জটিলতা দূর করে চলতি মাসেই নতুন বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এ দুই সুবিধা বাদ দেয়া হচ্ছে। তবে এর বিকল্প হিসেবে চাকরির মেয়াদ ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন গ্রেড স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক ধাপ উপরে উঠে যাবে। আর পরে ছয় বছর পর অর্থাৎ চাকরির মেয়াদ ১৬ বছর পূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন গ্রেড আরেকবার এক ধাপ ওপরে উঠবে। এসব বিধান রেখে নতুন বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এটি ভেটিঙের জন্য রোববার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, নতুন পে-স্কেলে চাকরিজীবীদের জন্য সরকার সুযোগ-সুবিধা বেশি দেয়ার চেষ্টা করছে। তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল থাকা বা না থাকার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের যে সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা অনুমোদনের জন্য চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নথি পাঠানো হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এর আগে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সচিব এবং বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সাথে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বৈঠকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের আদলে দু ধাপে বেতন গ্রেড বাড়ানোর প্রস্তাব রেখে সার-সংক্ষেপ চূড়ান্ত করা হয়।
আরও জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন পে-স্কেলসংক্রান্ত নথিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসে। রোববার অর্থমন্ত্রী নিজে ফাইল দেখে ওই দিন বিকেলেই ভেটিঙের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। পরের দিন সোমবার অর্থমন্ত্রী দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার অর্থমন্ত্রী দুবাই থেকে দেশে ফিরবেন। রোববার অথবা সোমবার পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা ছাড়াও অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন স্কেলের ১, ২ ও ৩ নম্বর গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যা সপ্তম বেতন স্কেলে ছিলো না। ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন করা হয়। ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামোর ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে প্রকৃচি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিসিএস শিক্ষক সমিতি, ২৬ ক্যাডার সমিতি বেতন-ভাতার বিষয়ে বেশকিছু আপত্তি তোলে। এসব প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অন্যান্য ক্যাডারদের বেতন বৈষম্য পর্যালোচনা করতে ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ মন্ত্রিসভা’ কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। সমস্যা দূর করতে ওই কমিটি বৈঠক করে নতুন পে-স্কেল নিয়ে ইতিবাচক একটি সমাধানের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। বিশেষ করে আগের বেতন স্কেলে যেসব সুবিধা ছিলো, তার চেয়ে বেশি সুবিধা রাখার পরার্মশ দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। কিন্তু টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা দেখা দেয়। অষ্টম জাতীয় বেতন কমিশন চাকরিজীবীদের এ সুবিধা বাতিল করার সুপারিশ করে। কমিশনের এ প্রস্তাব বেতনসংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশেও বহাল রাখা হয়। তবে এ দুটি সুবিধার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী প্রথমে বলেছিলেন, ‘টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড একসাথে রাখার পক্ষে নই। এর মধ্যে যে কোনো একটি বাদ দেবো। বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।’ এরপর ৭ সেপ্টেম্বর টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখার ব্যাপারে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের দেয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, নতুন পে-স্কেলে শেষপর্যন্ত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকছে না। উল্লেখিত সুবিধা না থাকার বিষয়টি এখন সচিবালয়ের প্রায় সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী প্রায় একই সুরে বললেন, ‘একবার আশাবাদী হচ্ছি। আবার হতাশার মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রধানমন্ত্রী একমাত্র পারেন এ সমস্যা সমাধান করতে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া হাসান মঙ্গলবার বলেন, ‘টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু যা শুনছি তাতে মনে হচ্ছে এ সুবিধা থাকছে না। যদি এ সুবিধা না রাখাই হয়, তাহলে আর কি করার আছে। টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে হলেও নতুন বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন যতো দ্রুত সম্ভব জারি করা হোক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’