আল শেফা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারও মৃত্যু : চিকিৎসক অবরুদ্ধ

???????????????????????????????

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আল শেফা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মিনারুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। বুকের ব্যথা নিয়ে গতকাল বুধবার সকালে তাকে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসার এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা চিকিৎসক রকিবুল হাসানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ছাতিয়ান গ্রামের ব্যবসায়ী মিনারুল ইসলাম (৪৮) গতকাল সকালে পেট ও বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পরিবারের লোকজন তাকে বামন্দীর আল শেফা ক্লিনিকে নেয়। সেখানে ডা. রকিবুল হাসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়। রোগীর ব্লাডপ্রেসার পরীক্ষা করে অন্তত ১০-১৫টি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। রোগীর ইসিজি পরীক্ষাও করানো হয়। কিন্তু ইসিজির যন্ত্রপাতি রোগীর শরীরে লাগানো হলেও যন্ত্রটি বিকল হওয়ায় পরীক্ষা সম্ভব হয়নি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে একজন রোগীর চিকিৎসায় ক্লিনিকে অব্যবস্থাপনা ও যন্ত্রপাতির বেহাল অবস্থা দেখে হতবাক স্বজনরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।
এদিকে ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর মিনারুলের শারীরিক অবস্থার উন্নতির পরিবর্তে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। পেট ফুলে উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। চোখের সামনে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু দেখে বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েন রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা। তারা ডা. রকিবুল হাসানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। চিকিৎসকের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ক্লিনিকে ভিড় জমায়।
খবর পেয়ে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. মজিবুল হক রোগীর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মারুফ হাসানকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের একটি দলও সেখানে পৌছায়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক রকিবুল হাসানের দাবি, রোগীর ব্লাড প্রেসার ২২০ বাই ১২০ ছিলো। এ কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে রোগীর প্রেসক্রিপশনে অন্যান্য খুটিনাটি বিষয় উল্লেখ থাকলেও ব্লাডপ্রেসারের বিষয়টি কেন লেখা হয়নি জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেননি। মিনারুল ইসলামের ভাতিজা চিকিৎসার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রোগী ভর্তির সময় ডা. রকিবুল হাসান ব্লাডপ্রেসার পরীক্ষা করে বলেছিলেন ১৬০ বাই ১০০। কিন্তু তিনি প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করেননি। ইসিজি করতে গিয়ে দেখা যায় বিপত্তি। সঠিক রোগ নির্ণয় না করেই ভুল ওষুধ সেবনের ফলে তার চাচার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ডা. রাকিবুল ইসলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে কর্মরত। প্রায়ই তিনি আল শেফা ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা হাসপাতালের আরএমও হিসেবে কর্মরত তার সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে কীভাবে তিনি সকাল ১০-১১টার মধ্যে কর্মস্থল ছেড়ে প্রাইভেট রোগী দেখতে আসেন তা নিয়ে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মিনারুলের লাশ ময়নাতদন্তের পরামর্শ দেয়া হলে বেকে বসেন রোগীর স্বজনরা।
এদিকে গতকালের ঘটনা প্রাথমিকভাবে মীমাংসা হলেও আল শেফা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কমেনি। এলাকার মানুষের অভিযোগ, জোড়াতালি দিয়ে ক্লিনিক চালিয়ে রোগীদের ধোকা দিয়ে টাকা নেয়া হয়। সার্বক্ষণিক চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদের কাউকে পাওয়া যায় না। কিন্তু দাপটের সাথেই চলছে ক্লিনিকটি।