এর আগেও ফাঁসি ফাঁসি খেলতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুধু ফাঁসির কারণেই নয়, আত্মহত্যাপ্রবণ সমাজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাও শিশুদের কৌতূহলবশে ওই পথে প্রভাবিত করে। সে কারণেই বলা হয়, শিশুদের সামনে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বা কেমন করে ফাঁস দেয়া হয় তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। কারণ, শিশুরা কৌতূহল প্রবণ। কী করলে কী হতে পারে তা বোঝার মতো হওয়ার আগেই কৌতূহলবশে এমন সব ক্ষতি করে বসে যা অপূরণীয়। সে কারণেই শিশুদের প্রতি বড়দের সচেতন দৃষ্টি অনিবার্য। সামান্য অসতর্কতায় হতে পারে সর্বনাশ!
প্রিণ্ট মিডিয়া বা খবরের কাগজে রশিতে ফাঁস লাগানোর মাঝে মুখের ছবিও যেমন ক্ষতির কারণ হতে পারে, তেমনই বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম তথা টেলিভিশনে সংবাদ সম্প্রচারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা না হলে কিছু দৃশ্য ছোট-বড় সকলের জন্যই হতে পারে ক্ষতির কারণ। বিশ্বকাপ ফুটবলে জিদানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছিলো মূলত ঢুস মারার দৃশ্য শিশুরাও দেখেছে ভেবে। শাস্তি না হলে অন্যরাও খেলার মাঠে আরো বাজে কিছু ঘটিয়ে বসতে পারে এবং তার প্রভাব পড়তে পারে শিশুদের সফেদ মনে। একইভাবে ফাঁসি বা ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার বিষয়গুলোও শিশুদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর। ভয়ঙ্কর।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রামের দরিদ্র দিনমজুরের দত্তক নেয়া শিশু সন্তানের গলায় ফাঁস লেগে মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুর গলায় ছাগলের রশির ফাঁস লেগে মৃত্যু হয়েছে। অনেকেরই অনুমান, ১০ বছর বয়সী সাগর রশি গলায় বেঁধে ফাঁসি ফাঁসি খেলা খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে মারা গেছে। অবশ্যই অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত হওয়া দরকার। তার আগে দরকার সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা। কারণ- অসচেনতায় বড়দের ভুলের কারণে বহু শিশুই অকালে ঝরে যায়।
শিশুদের সামনে অনেক কিছু আলোচনা বর্জনীয়। তার মধ্যে হিংসা, ভাগাভাগি, সাম্প্রদায়িকতা, আত্মহত্যা, নেশাগ্রস্ততা অন্যতম। শিশুরা যে কোনো বিষয়েই কৌতুহলী। ফলে এমন কিছু তাদের সামনে মেলে ধরা বা আলোচনা করা উচিত নয়, যা কৌতূহলবশে করতে গিয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর একটি শিশুও যাতে বড়দের অসতকর্তায় ঝরে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে এমন পরিবার-পরিবেশ, যে পরিবেশ-পরিবারে সকল শিশু সুন্দর মানসিকতায় সুহালে বেড়ে উঠবে, গড়ে তুলবে নিজেকে। তবেই উজ্জ্বল হবে জাতির ভবিষ্যত।