সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা : প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতি কৃতজ্ঞ

স্টাফ রিপোর্টার: মানবতাবিরোধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ায় প্রমাণ হয়েছে ১৯৭১ সালে তারা অপরাধ করেছেন। তারা দোষী ছিলেন। একই সাথে তাদের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিলো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতি কৃতজ্ঞ। গতকাল রোববার রাতে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে এক অনির্ধারিত আলোচনায় জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগণ এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে বক্তারা বলেন, কোনো চাপের কাছে প্রধানমন্ত্রী নতি স্বীকার করেননি। জাতি তার কাছে কৃতজ্ঞ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যা বিশ্বাস করতেন, তা বলতেন। আর যা বলতেন তা বাস্তবায়ন করতেন। একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। বঙ্গবন্ধু যেমন মাথা নত করতেন না, তার কন্যাও সমস্ত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জাতির কলঙ্ক মোচনে শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, অনেকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেছিলেন, এই বিচার ঠিক না, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মানা হয়নি। মূলত, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নয়। মানবাধিকার সংগঠন মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ বলেছিলো। তাদের জানা উচিত, মুক্তিযুদ্ধ আর গৃহযুদ্ধ এক নয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কিছু কণ্ঠ শুনতে পাই। তবে আমরা অবাক হই না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা, সপ্তম নৌবহরের কথা আমরা ভুলে যাইনি। আমরা এতো আহাম্মক জাতি নই। তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পরবর্তী সময়ে আমরা জেলে থাকা অবস্থায় আমাদের সামনে দিয়ে রাজাকারদের বের হয়ে যেতে দেখেছি। আর আমরা ছিলাম আটক। এটা করেছেন ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দেশ উন্নত হবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের ব্যাকরণ মেনে আইনি প্রক্রিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। অথচ যখন নতুন কুণ্ডুকে হত্যা করা হয়, ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়, তখন কোনো ব্যাকরণ মানা হয়নি।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নুরেমবার্গ ট্রায়ালে আপিলের ব্যবস্থা ছিলো না। এখানে আপিলের সুযোগ ছিলো, রিভিউ ছিলো। স্বচ্ছভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, জেনারেল জিয়া হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছেন। দেশকে পাকিস্তানি কায়দায় নিয়ে গেছেন।
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিলো। এই যুদ্ধাপরাধীরা একত্র হয়ে এই জঘন্য কাজ করেছিলো। বিচার কাজ করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অজ ধন্য, ধন্য শেখ হাসিনার জন্য।
সাবেক মন্ত্রী দীপু মণি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, বিচারের ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, আপনারা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটা কার্যক্রম তাকিয়ে দেখুন। একটু ধৈর্য ধারণ করুন। আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগে জামায়াত বলতো, তাদের দলে যুদ্ধাপরাধী নেই। কিন্তু প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে প্রমাণ হয়েছে তারা যুদ্ধাপরাধী ছিলো। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাহসের সাথে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, এই সংসদের সবচেয়ে ‘বেয়াদব’ সংসদ সদস্য ছিলেন সাকা। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে মৃত্যুবরণ করতে পারবো তা ভাবতে পারিনি। এই বিচারের জন্য আমরা গর্বিত, আনন্দিত। আলোচনায় আরও অংশ নেন জহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুল মান্নান, আবদুর রহমান, শামীম ওসমান।
এর আগে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দু যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বাংলাদেশে কেবল স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি থাকবে। এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দুটো পক্ষ। একটা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। আরেকটি বিপক্ষের শক্তি। আজকে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে থাকবে শুধু স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। স্বাধীনতা বিরোধীরা কেউ থাকবে না। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আজ আমি আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেছি। আজকে আমি চিৎকার করে সারা বাংলার মানুষকে বলতে চাই, শেখ হাসিনা থাকলে বাংলাদেশে কোনো রাজাকার আলবদর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। তিনি বলেন, বিচার শুরু হয়েছে, বিচার শেষ হবে। শেখ হাসিনা থাকলে গণতন্ত্র থাকবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। এর আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসিতে স্বস্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম এলাকার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, উনি ভাঙবেন, কিন্তু মচকাবেন না।