জনতার একস্লিপ : একান্ত রাজাকারী ভাবনা -আ.শু.বাঙাল

জনতার একস্লিপ
একান্ত রাজাকারী ভাবনা
-আ.শু.বাঙাল
আমাদের হ্যারেজ আলীর অনেকগুলো মুদ্রাদোষের মধ্যে আরেকটি মুদ্রাদোষ হলো, কোনো কিছু হ্যারেজ আলীর বিপক্ষে গেলে সে বলে ‘কপালের ভাগ্য খারাপ’ তাই এমনটি হলো। বোধ করি ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদেরও কপালের ভাগ্য খারাপ, তা’না হলে কি বিএনপিকে হটিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদশের ক্ষমতায় আসে? কিসে যে কি হলো! শত চেষ্টা করেও বাঙালিদের বাঙালি থেকে পাকস্তানি বানানো গেলো না। নারী নেতৃত্ব হারামের ফতোয়া দিয়েও তওবা আস্তাগফেরুল্লা পড়ে বেগম জিয়ার আঁচলের নিচে ঘাপটি মেরে থেকে মোটামুটি একটা অবস্থা দাঁড় করিয়েও শেষ রক্ষাটা করা গেলো না। তিন মাস ধরে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে, মানুষ মেরে, রেললাইন উপড়ে, ইউরোপ আমেরিকার হাত-পা চেপে ধরেও শেখের বেটিরে নামানো গেলো না। যাবেই বা কেন? বেগম জিয়ার বড় পোলাডারে আবার আমেরিকা পছন্দ করে না, ওই ব্যাটার সাথে নাকি মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে সেইজন্য। আরো রক্ষাটা হলো না একটুখানি ভূলের জন্য। ঘটা করে মন্ত্রী হয়ে গাড়ীর মাথায় যে বাংলাদেশ চায়নি সেই বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে চলাই কাল হলো। বাঁদরের দাঁত খিচানো বাঙালিরা সহ্য করলো না, দিলো ঘটি উল্টিয়ে। ন্যাও, এখন বোঝো ঠ্যালা, ঝোলো ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে।
এতেই শেষ হবে না বলে মনে হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে দলের গোড়ায়ও নাকি বছরের গোড়াতেই করাতের পোচ লাগাবে! এজন্য অবশ্য শেখ হাসিনার সরকার ততোটা আগ্রহী ছিলো না, সর্বনাশটা করেছে অন্য সরকার, এমরান এইচ সরকার। ব্যাটা ব্লগারের বাচ্চা। ব্লগে লেখালেখি করে ব্যাটা ছাওয়ালরা শাহবাগে লোক জড়ো করে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিলো। সারাদেশের লোক শাহবাগীদের কথায় উঠা-বসা করছিলো। মনে হলো দেশ এখন দুই সরকার চালাচ্ছে, একটা শেখ হাসিনার সরকার আরেকটা এমরান এইচ সরকার। শেখ হাসিনাও এটা বুঝতে পেরেই বোধকরি শাহবাগ থেকে ছাত্রলীগকে সরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, সাথে সাথে তার সরকারের ভাগীদার চটকদার বামপন্থি ইনু-মেনন সাহেবদের ছাত্ররাও শাহবাগ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। শাহবাগের শক্তি না ভাঙলে আমাদের বিচার অন্যভাবে হতো, ঠিক একাত্তরের কায়দায়। ঘর থেকে তুলে আনো, মারো আর ফেলে দাও। মেরে ফেলে দেয়া বাঙালিদের কিছু লাশ তো তাদের আত্মীয়-স্বজনরা খুঁজে পেয়েছলো। আমাদেরটা আমাদের স্বজনরা হয়তো তাও পেতো না! শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এজন্য যে অমানবিক অপরাধের বিচার তিনি সদয় হয়ে করছেন, আর বিচারে ফাঁসি হয়ে গেলে পুলিশ পাহারা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাবলিকের রোষানল থেকে বাঁচিয়ে লাশটাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন, এটাও তো একটা প্রোটেকশন! শেখের বেটিরে ধন্যবাদ না দিয়ে পারা গেলো না।
আজ নিরালায় বসে মনে হচ্ছে, একাত্তরের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো না। জননী স্বর্গাদপী গরিয়সী, ৭১ সালে জন্মভূমির প্রতি, স্বজাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রকারান্তরে মাকেই অবমাননা করেছিলাম, জননী জন্মভূমি আমাদের অপরাধের শাস্তি দিয়ে আমাদের দেয়া কলঙ্ক মোচন করছেন। মা তোমায় সেলাম, এই ঘৃণ্য অপরাধীকে শত অন্যায়ের পরও তোমার বুকে ঠাঁই দিচ্ছো বলে! কারান্তলে নিরালায় বসে একান্ত ভাবনার হিসাব-নিকাশ শেষে ইচ্ছে করছে কৃতকর্মের ফল তো পেলামই, পাপ মোচনের জন্য একবার চেষ্টা করি। কিন্তু তা আর হবার নয়, সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেইবা যেতে চায়? আমিও তা চাই না। কিন্তু পাছে লোকে কিছু বলে তাই অতৃপ্ত বাসনা নিয়েই চলে গেলাম। মরণের পরে যদি কোনো ধর্মে পুনর্জন্ম থাকে, তবে যেন এই বাংলায় বাঙালি হয়ে জন্ম নিয়ে আসি।