মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রথমদিনে গতকাল রোববার সারাদেশে অনুপস্থিত ছিলো প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো ১ লাখ ৮ হাজার ৪২১ জন ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো ৪১ হাজার ৪৭৫ জন। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সাতজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পাঠানো প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল রোববার বেলা ১১টায় শুরু হয় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। গতকাল ছিলো ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা।
তবে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের কারণে আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষা হবে ৩০ নভেম্বর। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোদশমিক আলমগীর এ তথ্য জানান। আজ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বাংলা পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে মোট ৫২টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলো ২০ হাজার ৬৩ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৯ হাজার ৭০ জন ও ১০ হাজার ৯৯৩ জন ছাত্রী। উপস্থিত ছিলো ১৯ হাজার ৬০৮ জন। ৮ হাজার ৮৪২ জন ও ১০ হাজার ৭৬২ জন ছাত্রের মধ্যে। পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো ৪৫৮ জন। ২২৮ জন ছাত্র ও ২৩০ জন ছাত্রী। উপস্থিতির হার ৯৭ দশমিক ৭১ ভাগ। জেলায় ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে ২৯ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলো ১ হাজার ৮৮১ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৪ জন ছাত্র ও ৮৬৭ জন ছাত্রী। উপস্থিত পরীক্ষার্থী ১ হাজার ৫৯২ জন। এরমধ্যে ৮৩৩ জন ছাত্র ও ৭৫৯ জন ছাত্রী। মোট অনুপস্থিত ২৮৯ জন। এরমধ্যে ১৮১ জন ছাত্র ও ১০৮ জন ছাত্রী। উপস্থিতির হার ৮৪ দশমিক ৬৩ ভাগ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষসূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক সমাপনীতে ১ লাখ ৮ হাজার ৪২১ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। এর মধ্যে ৫১ হাজার ৬২৬ জন ছাত্রী এবং ৫৬ হাজার ৭৯৫ জন ছাত্র। অন্যদিকে ইবতেদায়িতে ৪১ হাজার ৪৭৫ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। এর মধ্যে ১৬ হাজার ২৪৬ জন ছাত্রী এবং ২৫ হাজার ২২৯ জন ছাত্র। ইংরেজি পরীক্ষায় প্রাথমিক সমাপনীতে তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ইবতেদায়িতে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় ৫২টি কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মোট ১৯ হাজার ৬শ ৫জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলো ৪শ ৫৮জন এবং উপস্থিতির হার ৯৭ দশমিক ৭১ ভাগ। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৩টি কেন্দ্রে মোট ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২হাজার ৫শ ৭৩জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৩হাজার ৭২জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ৬৮জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৬৯জন।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় ১৬টি কেন্দ্রে মোট ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২হাজার ৭শ ৫৮জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৩হাজার ৩শ ৭০জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ৫৭জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৫২জন। দামুড়হুদায় ১৩টি কেন্দ্রে মোট ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২হাজার ১শ ৭৫জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ২হাজার ৬শ ৪১জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ৩৭জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৫৩জন।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় ৯টি কেন্দ্রে মোট ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২শ ৬৭জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ২শ ৮৩জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ৬৬জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৪৮জন। জীবননগরে ৫টি কেন্দ্রে ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ১শ ৫৬জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ১শ ৯৭জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২৮জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ২৬জন। তবে এ বছর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতে ছেলে শিক্ষার্থীর তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম ছিলো। তাছাড়া কোনো কেন্দ্রে কোনো শিক্ষার্থী বহিস্কার হয়নি বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা গেছে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও দক্ষিণচাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় পৌর এলাকার ১৪টি বিদ্যালয় ও মাদরাসার ৬শ ৮৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬শ ৪৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. রশিদ, কেন্দ্র সচিব বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবির ও দক্ষিণচাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। অংশ নেয়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, আজমপুর, শ্যামপুর, পরাণপুর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর, পূর্বরামনগর, পশ্চিমরামনগর, কাস্টমস, কেরুজ, জয়নগর, দক্ষিণচাদপুর, দর্শনা ডিএস মাদরাসা, আলহেরা, লিটিল এনজেলস ও অংকুর আদর্শ বিদ্যালয়।।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় প্রাথমিক ও এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার বেলা ১১টার দিকে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রাথমিক পরীক্ষার্থী ছিল ৪৩৪জন। অনুপস্থিত ছিলো ৮জন এবং এবতেদায়ি পরীক্ষার্থী ছিলো ১৩৪জন অনুপস্থিত ছিলো ৩২জন। অপরদিকে কার্পাসডাঙ্গার কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রাথমিক পরীক্ষার্থী ছিলো ৩৩২জন অনুপস্থিত ছিল ৪জন। কার্পাসডাঙ্গার হল সুপারের দায়িত্ব পালন করেন মো. সাদিকুর রহমান ও কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বে ছিলেন শাহাবুদ্দিন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে ১০টি কেন্দ্রে ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ১হাজার ২শ ৯৬জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ১হাজার ৬শ ৭৯জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ৬৬জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ৫৬জন। তবে লক্ষণীয় যে, এ বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতে ছেলে শিক্ষার্থীর তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিলো। ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৯টি কেন্দ্রে মোট ১৫ হাজার ৯২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলো ২শ ৮৯ জন এবং উপস্থিতির হার ৮৪ দশমিক ৬৩ ভাগ। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬টি কেন্দ্রে মোট ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ১শ ৯৯জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ১শ ৫৬জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২৬জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ১৫জন। আলমডাঙ্গায় ৯টি কেন্দ্রে মোট ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ২শ ১১জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ১শ ২৩জন। অনুপস্থিত ছেলে শিক্ষার্থী ছিলো ৬১জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো ১৯জন। উপজেলার উথলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়িয়া সরকারি বালক বিদ্যালয় বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়িয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, বাঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গয়েশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসাদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও দৌলৎগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়। এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় উথলী, আন্দুলবাড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়, হাসাদাহ, রায়পুর ও মডেল কেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ইউএনও নুরুল হাফিজসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তারা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া ৯নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬টি প্রাথমিক, ৩টি কিন্ডার গার্টেন ও ১টি মাদরাসার ২৭২জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম দিনে ২৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। হল সুপার কামরুন নাহার ও কেন্দ্র সচিব সাগরিকা বিশ্বাস জানান, ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩০ জন ও এবতেদায়ি ৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জন অংশগ্রহণ করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১০৯ জন ছেলে ও ১২৭ জন মেয়ের মধ্যে ৩ জন ছেলে ও ৩ জন মেয়ে ও এবতেদায়ি ১জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জেলার ৩৪টি কেন্দ্রে প্রাথমিক সমাপনীতে ১৩ হাজার ৪২২জন ও এবতেদায়ি সমাপনীতে ৭৩২জন ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা ৫৯৮জন বেশি। ছেলে ৬ হাজার ৪১২জন এবং মেয়ে ৭ হাজার ১০ জন। এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অবশ্য ছেলেদের সংখ্যা বেশি। ছেলে ৪৬১ জন এবং মেয়ে ২৭১ জন। এদিকে পরীক্ষা শুরুর পর গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানায় জেলা প্রশাসন।