নৃশংসভাবে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে শিশু খুন : প্রধান সন্দেহভাজনের বাড়ি থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি-জ্যাকেট উদ্ধার

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ৩ বছরের মাসুম শিশুপুত্রকে নৃশংসভাবে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে হত্যা ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজনের বাড়ি থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি-জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার রাতে গ্রেফতারকৃত ৪ জন ছাড়াও গতকাল আরও ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় আটক ৬ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল বানিনাথপুর গেলে গ্রামের বহু নারী-পুরুষ জড়ো হন নিহত শিশুর বাড়ি। সে সময় গ্রামবাসী জানায়, আলমডাঙ্গার বানিনাথপুর গ্রামের ৩ বছরের নিষ্পাপ শিশুপুত্র এনামুলকে নৃশংসভাবে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন ফজলুর বাড়ি থেকে রক্তমাখা একটি লুঙ্গি ও জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে গ্রামবাসী ফজলুর বাড়ি ঢুকে উঠোনে ভেজা লুঙ্গি শুকোতে দেয়া অবস্থায় দেখতে পায়। তারা লুঙ্গি ভালোভাবে পরখ করে দেখতে পায় পরিষ্কার করা সত্ত্বেও লুঙ্গিতে রক্তের দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে। সে সময় গ্রামবাসী ফজলুর ঘরে ঢুকে রক্তমাখা একটি জ্যাকেট উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর থেকে ওই বাড়ি গ্রামবাসী ঘিরে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে রক্তমাখা লুঙ্গি ও জ্যাকেট উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সে সময় গ্রামবাসী ফজলুর মেয়ে অর্থাৎ অন্যতম সন্দেহভাজন নায়েব আলীর স্ত্রী ফরিদা খাতুন ও রেজাউলের স্ত্রী রেহেনাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এছাড়া ঘটনার রাতেই পুলিশ একই গ্রামের শাহাদতের ছেলে ফজলু, ফজলুর ছেলে রেজাউল ও ফজলুর জামাই নায়েব আলীকে আটক করে। সন্দেহভাজন রক্তমাখা লুঙ্গিটি রেজাউলের ও জ্যাকেটটি জামাই নায়েব আলীর বলে গ্রামবাসী দাবি করেছে।
এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামবাসীর অনেকেই প্রকাশ্যে দোষারোপ করেছেন ফজলুর স্ত্রী খালেদার বিরুদ্ধে। খালেদা খাতুনই তার ছেলে ও জামাইকে দিয়ে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তাদের দাবি খালেদাকে পুলিশ ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকাশ হয়ে পড়বে সবকিছু। ফজলুর ছেলে রেজাউল হক সম্পর্কেও গ্রামে আগে থেকেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তার দস্যুসুলভ আচরণ, চরমপন্থিদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্কেও গ্রামবাসী এখন উচ্চকন্ঠ। বানিনাথপুর গ্রাম সংলগ্ন মধুপুর গ্রাম। সেই গ্রামের মনি নামের এক ব্যক্তির দাবি ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজের পর ফজলুর জামাই অন্যতম সন্দেহভাজন নায়েব আলী পাঁচলিয়া থেকে খুব দ্রুত হেঁটে বানিনাথপুরে যায়। মধুপুর-বানিনাথপুর মোড়ে তার সাথে মনির দেখা হয়। গ্রামবাসীর ধারণা রেজাউল আর নায়েব আলী মিলেই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী ফজলুর স্ত্রী খালেদা খাতুন। এমন দাবি গ্রামের মহিলাদের। কেন রেজাউল হক কিংবা নায়েব আলী হত্যাকাণ্ড নিজ পানবরজে ঘটাতে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রামবাসী জানায়, নিজ পানবরজে নিরাপদে হত্যা করে লাশ অন্যত্র নিয়ে ফেলে দিয়ে আসতো তারা। কিন্তু পারেনি। পানবরজের পাশে কয়েকজন কৃষক ধান বাঁধছিলো বলে। তারা দেখে ফেলবে এ ভয়ে লাশ কোথাও সরাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন গ্রামবাসী।
এদিকে, আলমডাঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে পানবরজে শিশুটিকে জঘন্যভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটি ফজলুর। ফজলুর বাড়ির ওপর দিয়ে ছাড়া ওই পানবরজে ঢোকার দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নেই। সে কারণে ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা থাকা খুবই স্বাভাবিক বলে পুলিশের ধারণা।
কী এমন শত্রুতার জন্য এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড? এ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে উপস্থিত গ্রামবাসী বলে, প্রায় এক বছর আগে আটক রেজাউল তার স্ত্রীকে মারধর করছিলো। ঠিক সেই সময়ে তাদের রান্নাঘরে আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় নিহত শিশুপুত্রের এক ভাই রেজাউলকে চড় মেরে বসে। সে সময় রেজাউল, তার বোনজামাই নায়েব আলী দু’জন মিলে নিহত শিশুপুত্রের ভাইকে পাল্টা মারধর করে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নূর ইসলাম মেম্বার রেজাউলকে মারধর করে। পরে থানা পুলিশ পর্যন্ত ঘটনাটি গড়ায়। সালিস বৈঠকে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছিলো রেজাউল। কিন্তু সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সে প্রতিজ্ঞা করে। নুর ইসলামের ছেলেদের কচুকাটা করার হুমকিও দিয়েছিলো বলে নুর ইসলাম মেম্বারের পরিবারের দাবি। কিন্তু সে হুমকি কেউ আমলে নেয়নি। ভেবেছিলো রাগের মাথায় কি বলছে না বলছে। কিন্তু সে দিনের সেই হুমকি এভাবে ভয়ানক বাস্তব হয়ে উঠবে তা কেউ কল্পনাও করেনি।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের বানিনাথপুর গ্রামের নূর ইসলাম মেম্বারের ৩ বছর বয়সী শিশুপুত্র এনামুলকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাড়ির সকলে মিলে সম্ভাব্য পাড়ার সকল বাড়িতে খোঁজ করেও শিশুটির হদিস না পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফজলুর পানবরজে শিশুপুত্র এনামুলের গলাকাটা লাশ পায়। রাতেই সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। গ্রেফতার করে ১ নারীসহ ৪ সন্দেহভাজনকে। রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ আছর গ্রামের গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় নিহত শিশুপুত্রের পিতা নূর ইসলাম মেম্বার বাদী হয়ে আটক ৬ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।