বখতিয়ার হোসেন বকুল: কালের বিবর্তনে অনেক কিছুই হারায়। বদলে যায় পরিবেশ, বদলে যায় বাহন। বাংলাদেশে দিন বদলের মেলায় বদলেছে বোধ হয় সবচেয়ে বেশি বাহন। যার চাপে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম পাতলা পিচের দুর্বল রাস্তার। অবশ্য শহরগুলোতে প্যাডেল মেরে ঘাম ঝরানো সেই রিকশার বদলে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের আগমনে বেড়েছে অদক্ষ চালকদের হুড়োহুড়ি আর বাড়তি ভিড়ে দুর্ঘটনা। এ দৃশ্য চুয়াডাঙ্গার প্রায় সর্বত্র।
দামুড়হুদা উপজেলার কোথাও এখন আর আগের মতো প্যাডেলচালিত রিকশা-ভ্যানের দেখা মেলে না। বলতে গেলে এর দখল নিয়েছে ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি। শহরে চলাচলকারী অধিকাংশ রিকশা-ভ্যানই এখন ব্যাটারিচালিত। দ্রুতগতির এই ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি কিছুটা হালকা হওয়ায় প্রায়ই পড়ছে দুর্ঘটনার কবলে। আর এ সমস্ত ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়িতে চার্জ দিতে শহরের অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে বেশকিছু অবৈধ চোরাই গ্যারেজ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুত চুরির মহোৎসবে মেতে উঠছে ওই সমস্ত গ্যারেজ মালিকরা। এর পাশাপাশি প্রতিদিন অপচয় হচ্ছে বিদ্যুত। অপরিকল্পিতভাবে এ সমস্ত ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি তৈরির ফলে একদিকে যেমন বেড়ে গেছে যানজট অপরদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই সন্ধ্যার পর দেখা দিচ্ছে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের সমস্যা। এছাড়াও এ সমস্ত রিকশাভ্যান তৈরির ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে এ সমস্ত ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি।
উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজার, দর্শনাসহ বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান তৈরির কারখানা। দামুড়হুদা সদরের উপজেলা মসজিদের সামনের বিল্লালের সাইকেল পার্টসের দোকানেও তৈরি হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান। একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি তৈরি করতে সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাগে বলে জানান দোকান মালিক।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক দামুড়হুদার পুরাতন বাস্তুপুরের সবুজ জানায়, দামুড়হুদা উপজেলায় প্রায় হাজার খানেক ব্যাটারিচালিত ভ্যান ইতোমধ্যেই রাস্তায় চলাচল শুরু করেছে। প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩টি করে ভ্যান তৈরি হচ্ছে। ফলে আগামীতে এ ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও ধারণা তার। বিদ্যুত চুরি রোধসহ বিদ্যুতের অপচয় ও সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ সমস্ত ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান চলাচল বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য এলাকার সুশিল সমাজের। ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি চলাচল বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সচেতন মহলের এমনটাই প্রত্যাশা।