আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ৩ বছরের নিষ্পাপ শিশু এনামুলকে নৃশংসভাবে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে খুন করেছে মানুষ নামের নরপশু বা নরপশুরা। গতকাল সন্ধ্যার পর আলমডাঙ্গার বানিনাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হত্যার আগে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে কি-না তা ময়নাতদন্তে জানা যেতে পারে। আজ শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হবে।
ঘাতকরা ফুল দেয়ার লোভ দেখিয়ে বানিনাথপুরের নূর ইসলাম মেম্বারের ৩ বছরের শিশুপুত্র এনামুলকে কৌশলে বাড়ির পাশের পানবরজে ডেকে নিয়ে এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়ে অভিযোগ তুলে বলেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ গতরাতেই পানবরজ মালিক একই গ্রামের ফজলু, ফজলুর রহমানের ছেলে রেজাউল ও জামাই নায়েব আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে। নায়েব আলীর সাথে শিশু এনামুলের পিতা নূর ইসলামের বিরোধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানালেও কী নিয়ে বিরোধ তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের বানিনাথপুর গ্রামের নূর ইসলাম মেম্বারের ৩ বছর বয়সী শিশুপুত্র এনামুলকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাড়ির সকলে মিলে পাড়ার সম্ভাব্য সকল বাড়িতে খোঁজ করেও শিশু নূরের হদিস পায়নি। অস্থিরতা আর উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে পুরো গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে পুকুরের পানিতে তল্লাশির প্রক্রিয়া করা হয়। পাড়ার সকল পুকুরে জালও টানা হয়। কিন্তু না, পুকুরে শিশু লাশ পাওয়া যায়নি। অতোটুকু শিশু এনামুল কোথায় যেতে পারে? খুঁজতে খুঁজতে রাত ৮টা বেজে যায়। এরই এক পর্যায়ে নূর ইসলাম মেম্বারসহ কয়েকজন গ্রামের শাহাদতের ছেলে ফজলুর পানবরজে ঢোকেন। কয়েক পিলি দেখার পর দৃশ্য দেখে সকলে চমকে উঠেন। পানবরজের ২ সারির মাঝে ৩ বছরের শিশুপুত্র এনামুলের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পায়। রক্তে ভিজে গেছে সেখানকার মাটি। লাশের পাশে পড়ে আছে যে ব্লেড দিয়ে নৃশংসভাবে শিশুর গলা কাটা হয়েছে, সে রক্তমাখা ব্লেড। আরেক পাশে পড়ে আছে একগুচ্ছ মোরগবাকা (মোরগফুল) ফুল। এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত অধিকাংশের ধারণা ফুল দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিষ্পাপ শিশুকে ডেকে নিয়ে পানবরজে নিয়ে যায় নরপশু ঘাতক বা ঘাতকরা। পরে ধারালো ব্লেড দিয়ে শিশুটির গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, এ ঘটনা জানাজানি হলে বানিনাথপুরসহ পার্শ্ববর্তী মধুপুর ও পাঁচলিয়া থেকে রাতেই শ শ মানুষ ছুটে আসে।
কিন্তু কেন এ নৃশংসতা? তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে পূর্ব শত্রুতার কারণে মানুষরূপী নরপশুরা এমন নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সকলে অনুমান করছে। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনিও পূর্ব শত্রুতার কারণেই এমন নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। নূর ইসলামের পরিবার ও অধিকাংশ গ্রামবাসী ধারণা করছে ওই পানবরজের মালিক ফজলুর জামাই পার্শ্ববর্তী পাঁচলিয়া গ্রামের নায়েব আলী এ নৃশংস ঘটনা ঘটাতে পারে। শুধুমাত্র তার সাথেই নূর ইসলামের পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।
বেশ সরল-সোজা মানুষ হওয়ায় এলাকায় নূর ইসলাম মেম্বার বেশ জনপ্রিয়। তার ৪ সন্তানের মধ্যে এনামুল ছিলো সকলের ছোট। দেখতে বেশ সুন্দর ও আলাপি হওয়ায় পাড়ার সকলের নিকট ছিলো আদরের। নিষ্পাপ এ শিশুর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুধু শিশুটির বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনরাই নয়, পুরো এলাকাবাসীও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। পরিবারের সাথে সাথে স্বজনের মতোই যেনো কাঁদছে গোটা এলাকা।