এমএলএম কোম্পানি টিয়েন্স’র মহিলাসহ ৩ জনকে উদ্ধার : বাড়ির মালিক মনছের আটক

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত এমএলএম কোম্পানি টিয়েন্স’র মহিলাসহ সেভেন স্টার ও ফাইভ স্টার তকমাধারী আটকে রাখা ৩ জনকে সোনাতনপুরের মনছের আলীর বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং’র নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে গত বুধবার তাদেরকে অফিস থেকে তুলে নিয়ে সোনাতনপুরের মনছেরের বাড়িতে আটকে মারধর করার অভিযোগ করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানের সময় বাড়ির মালিক ফোরস্টার মনছের আলীকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ বলেছে, কেউ প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে আটকে নির্যাতন করা অন্যায়। সে কারণেই বাড়ি মালিককে ধরে থানায় নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, কয়েক মাস পূর্বে আলমডাঙ্গার নিমতলা গ্রামের চা দোকানি আশানুলের ছেলে হাউস (২৫) ও হাউসের স্ত্রী তমা মিলে মুন্সিগঞ্জ হাসপাতালের নিকটে ভাড়াঘরে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি টিয়েন্স’র নামে অফিস খুলে বসে। রাতারাতি হাইস্কুলের গণ্ডি পার না হওয়া হাউস আলী টাই-স্যুটেট-বুটেট হয়ে টিয়েন্স’র ফাইভ স্টার গ্রেডের মহা অফিসার বনে যান। তার স্ত্রী তমাও আরেক ফাইভ স্টার গ্রেডের অফিসার হয়ে অফিসের শোভা বর্ধন করতে থাকেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের সাথে ব্যবসা করলে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাতেন এলাকার কিশোর ও যুবক শ্রেণিকে। এমনকি এক বছরেই ঢাকায় ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার স্বপ্নও তাদের নিকট মোটেও অলীক ছিলো না। এমন উদাহরণেরও জুড়ি ছিলো না তাদের গল্পের ঝুড়িতে। কেউ তাদের সদস্য হয়ে তাদের সাথে ব্যবসার মাধ্যমে অন্য যতো জনকে সদস্য করাতে পারবে তাদের সকলের আয় থেকেও কমিশন পাওয়ার জ্যামিতিক সিস্টেমের মাধ্যমে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার সহজ সুযোগের কথা বলে এজেন্ট শিকার করতো এরা। এদের পাতা ফাঁদে পড়ে প্রায় ৩ মাস পূর্বে আলমডাঙ্গার কেদারনগর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ওবাইদুল্লাহ ও সোনাতনপুরের মৃত নফর আলীর ছেলে মনছের আলী। এরা ২ জনে ওই এমএলএম কোম্পানির সাথে ব্যবসা করার শর্তে ফাইভ স্টার দম্পতির নিকট ২ লক্ষাধিক টাকা তুলে দেয়। বিনিময়ে টিয়েন্স কোম্পানি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রি তুলে দিয়েছে। পণ্যগুলি বাংলাদেশে বিপননের ক্ষেত্রে যথার্থ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকা, অত্যধিক চড়া মূল্য হওয়ার কারণে তারা বিক্রি করতে পারছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে ২ অতি লোভী ৪ স্টারধারী মনছের আলী ও ওবাইদুল্লাহ ওরফে শিহাব। তারা কৌশলে টিয়েন্স’র সেভেন স্টার তকমাধারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিরাজ হোসেনকে গত বুধবার মুন্সিগঞ্জে ডেকে নেন। মিরাজ হোসেনের বাড়ি বাগেরহাটের বহুরবলিথা গ্রামে। সেভেন স্টার মিরাজ মুন্সিগঞ্জের অফিসে উপস্থিত হলে তাকেসহ মুন্সিগঞ্জের বস ফাইভ স্টার বস দম্পতি হাউস-তমাকে আটকে রেখে স্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে তাদের ৩ কর্মকর্তাকে ধরে নিয়ে মনছের আলীর সোনাতনপুরের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। সেখানে তাদেরকে মারধর করার অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার সোনাতনপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মনছের আলীর বাড়ি থেকে টিয়েন্স’র সেভেন স্টার মিরাজ ও ফাইভস্টার দম্পতি হাউস-তমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। উদ্ধারকৃত সেভেন স্টার মিরাজ তার শার্টে লেগে থাকা রক্তের দাগ দেখিয়ে তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় ফাইভস্টার তমা অভিযোগ করে বলেন, তিনি স্থানীয় নেতা শিলনের পা জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু তারপরও তাদের মাফ করা হয়নি। এদের উদ্ধারের সময় পুলিশ মনছের আলীকেও আটক করে থানায় নিয়ে যায়। হাউস প্রশ্ন করেন- তারা যদি আইন বহির্ভূত কিছু করে, তাহলে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে নিজেরা তুলে নিয়ে গিয়ে ২ দিন ধরে আটকে রেখে কেন নির্যাতন করা হলো?

এলাকাবাসীর অনেকেই অভিযোগ করেছে, ফাইভ স্টার হাউস-তমা দম্পতি মুন্সিগঞ্জে ডেসটিনির মতো আরেকটা হায় হায় কোম্পানি সৃষ্টি করে সহজ-সরল মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছিলো। তারা সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করতে বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমনকি মাননীয় প্রেসিডেন্টের ছবি এডিট করে কোম্পানির ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতো। যাতে সহজেই মানুষ তাদের ব্যবসায় যোগ দেয়।