দায়িত্বশীলদের দায় এড়ানো নয়, দরকার দূরদর্শীতা

জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর বসার বেঞ্চের নিচে সাপ? পরীক্ষায় বসার পরপরই কোমলমতি পরীক্ষার্থীকে দংশন করে সাপে। পরীক্ষার বদলে তাকে বাঁচার লড়াইয়ে নামতে হয়। ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। ঘটনাটি গত পরশু মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উথলীতে ঘটে। এ ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করবেন কীভাবে? জগতের যতো সাপ আছে সব সাপের মৃত্যু কামনায় সৃষ্টি কর্তাকে ডাকবেন? নাকি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তার অদূরদর্শিতাকে দায়ী করার মধ্যদিয়ে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখবেন? যদিও দায় এড়ানোর যুক্তি ভুরি ভুরি।
ভাগ্যিস সাপে দংশন করলেও সাপটি হয় বিষধর ছিলো না, নতুবা বিষ প্রয়োগের সুযোগ পায়নি। দাঁত বসালেও তার শরীরে সাপের বিষক্রিয়া বিনষ্টের ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়নি। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতেও খুব একটা বিলম্ব হয়নি শিশু ফারজানাকে। সুহালে ওর বাড়ি ফেরা শিক্ষক-সহপাঠীসহ সচেতন সমাজ খুশি হলেও সঙ্গত কারণেই মতলববাজ ওঝা কবিরাজের মন খারাপ। কেননা, বাণিজ্য হাতছাড়া। যদি হাসপাতালের বদলে ওঝা কবিরাজের আস্তানা-আখড়ায় নেয়া হতো? চলতো নাটক। ঝাড়ফুঁক আর কাটাছেঁড়ায় সুস্থ করে তোলার কর্তৃত্ব ফলিয়ে হাতিয়ে নিতো অর্থ। সেটা হয়নি, যা হয়েছে তা হলো- দংশিত পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা এবং কেন্দ্রের অন্য পরীক্ষার্থীদের আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দেয়া। দুঃসহ স্মৃতিও বটে। দুর্বল চিত্তের শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ স্মৃতি কতোদিন পিছু তাড়া করবে কে জানে! অবশ্যই সাপ আতঙ্কের মধ্যে যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তাদের উত্তরপত্রের মূল্যায়নে বিশেষ বিবেচনা যেমন দাবি রাখে, তেমনই পরীক্ষাকেন্দ্রে সাপে কাটার কারণে পরীক্ষা দিতে না পারা পরীক্ষার্থীর একটি বছর যাতে নষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করা। কারণ, তার পরীক্ষা দিতে না পারাটা পরীক্ষার্থীকে সাপে কাটার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সাঈমা ইউনুস দ্রুত সুচিকিৎসায় যে ভূমিকা রেখেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি নিশ্চয় বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের মূল্যবান একটি বছর বিনষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। এ প্রত্যাশা অবশ্যই অবান্তর নয়। শিশু ফারজানা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের এটুকু মাতৃছায়াতো পেতেই পারে।
অবশ্যই পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানে ও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে, তা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ঝোড়-জঙ্গল। দীর্ঘদিনের অপরিষ্কার ঝুপড়ি। সেখানে শুধু সাপের বাসাই নয়, ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করা মশার আবাসস্থল বললে ভুল হয় না। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে এ ধরনের পরিবেশ প্রধান শিক্ষকের নজর এড়ালো কীভাবে? বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দইবা এর দায় এড়াবেন কোন যুক্তিতে? দায় এড়ানোর যুক্তির চেয়ে দায়িত্বশীলদের দরকার দূরদর্শিতা।