চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহে হানাহানিতে হত যুবলীগ কর্মী : আওয়ামীলীগ সমর্থক মৃত্যু শয্যায়

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ বাজারে ধারালো অস্ত্র ভুজালি ও চাকুর উপর্যপুরি কোপে যুবলীগকর্মী আজিজুল হক (৩৮) খুন হয়েছে। ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন অপরপক্ষ যুবলীগ কর্মীর পিতা আওয়ামী লীগ সমর্থক শাজাহান আলী বুদো (৫৫)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবলীগ দুপক্ষের পূর্ব বিরোধের জের ধরে হামলা-পাল্টা হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় পর পর তিনটি বোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ডিঙ্গেদহ বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই আতঙ্কের আঁচ চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে পৌঁছেও পরিস্থিতি থমথমে করে তোলে। প্রশ্ন ওঠে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের টানা ক্ষমতার ৭ বছর পর এখন খুনোখুনি কেন? খুনের মতো ঘটনার পরও পুলিশের নীরবতাই বা কেন? অবশ্য যৌথবাহিনী কয়েকজনকে আটক করেছে বলে খবর পাওয়া গেলেও তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সূত্র বলেছে, নেহালপুর থেকে হাফিজুল নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।
নিহত আজিজুল হক চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মানিকদিহির আবুল মণ্ডলের ছেলে। স্থানীয় যুবলীগ কর্মী। তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর ওপর হামলাসহ ডিঙ্গেদহের যুবলীগ কর্মী তোরাপ হোসেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা রয়েছে। পুলিশ বলেছে, গতরাতে মৃতদেহ হাসপাতালেই রাখা ছিলো। আজ ময়নাতদন্ত করা হতে পারে। তবে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ বাদী হয়ে মামলা করেনি। আজ মামলা হতে পারে। অপরদিকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম শাজাহান আলী বুদোর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি মৃত রমজান মণ্ডলের ছেলে। স্থানীয় যুবলীগ কর্মী নূর নবীর পিতা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহত শাজাহান আলী বুদো বলেছেন, সন্ধ্যায় ডিঙ্গেদহ চৌরাস্তার মোড়ের নিকটস্থ রফিকের চা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় একই গ্রামের আজিজুল হক আজ্জুল ও কালাম ওই চায়ের দোকানে আসে। আমি ওদের দেখে চা দোকানের ভেতর থেকে বের হই। আজিজুল গালিগালাজ করতে থাকে। আমি পড়ে যাই। এরপর কি ঘটেছে জানি না। এখন আমি হাসপাতালে। চিকিৎসক বলেছেন, পেটে ও মাজায় ছুরিকাঘাত গুরুতর। ফলে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সে কারণেই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান জানান, যুবলীগের বিবদমান দুটি গ্রুপের ছত্রছায়ায় এ খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কাউকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে আজিজুল হকের সাথে থাকা স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবুল কালাম জানান, আজিজুল হক ও আমি স্থানীয় মাছের হাটে ইজারার কাজ করি। সারাদিন এক সাথে কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় ডিঙ্গেদহ চৌরাস্তার মোড়ে পৌঁছুতেই তোরাপ, শাহিন, নূরনবী, সেলিম ও বজলুসহ অনেকে আমাদের ওপর হামলে পড়ে। আমাকে মারধর করে। আজিজুলকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আমরা বুদোর বাড়ি থেকে আজিজুলের মৃতদেহ উদ্ধার করি। ওকে ভুজালি, চাকু দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে ওরা। আবুল কালাম আরো বলেছেন, আমরা যুবলীগ নেতা নঈম জোয়ার্দ্দারের সাথে আছি। আর ওরা জিপু চৌধুরীর লোক। এ নিয়ে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। গত কয়েকদিন ধরেই জিপু গ্রুপের লোকজন আমাদের মারার জন্য ঘুরছিলো। ২/৩ দিন আগে আমাদের সোহেল ও সাইদ নামের দুজনকে মারধর করে। এরপর আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আজিজুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করলো। গুলি করলো। শুধু কুপিয়ে তো নয়, গুলিও করেছে।
অভিযুক্ত তোরাপের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তা রিসিভ করা হলেও বলা হয়, রং নাম্বার। তবে জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেছেন, আলমডাঙ্গায় একটি কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার সময় শুনলাম ডিঙ্গেদহে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। যুবলীগে কোনো গ্রুপিং নেই। স্থানীয়ভাবে ওখানে কিছু ব্যক্তি উসকানি দিয়ে পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলেছে। হতাহতের ঘটনা দুঃখজনক।
এদিকে ঘটনার পর পরই চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরেও উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, ঘটনা শুনেছি। মামলা হয়নি। অপরদিকে ঘটনার পর পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিঙ্গেদহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের অনেকে। ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতৃবৃন্দও হাসপাতালে ছুটে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ান। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ওরা যাচ্ছে তাই শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ৭ বছর চুয়াডাঙ্গায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন ঘটছে। যুবলীগের তকমা নিয়ে তরবারি দিয়ে মানুষ খুনের নেশায় মেতেছে। পক্ষান্তরে বলা হয়েছে, কিছু ব্যক্তি পদ পদবি না পেয়ে উশৃঙ্খলদের দিয়ে উসকেই শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলছে।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি এক যুগেরও বেশি সময় পর ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুকে। অপরদিকে যুবলীগ নেতা নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার এ কমিটিকে কেন্দ্রে বসে মনগড়া কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে যুবলীগের সক্রিয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এ নিয়ে মাঝে মাঝে উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। ডিঙ্গেদহে তোরাপ যেমন জিপু চৌধুরীর পক্ষে, তেমনই আজিজুল হকও ছিলো নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারের সমর্থক। এর আগেও এদের মধ্যে ডিঙ্গেদহে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। মামলাও হয়েছে। যে মামলার আসামিও ছিলেন আজিজুল হক। এরপর ঝরলো রক্ত।

DSC03043