মাথাভাঙ্গা মনিটর: প্যারিসে হামলার একদিন পরে বেলজিয়ামে বসবাসরত একটি ফরাসি পরিবারের তিন ভাইয়ের দিকে নজর পড়েছে তদন্ত কর্মকর্তাদের, তাদের একজনকে পুলিশ খুঁজছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। লাঁ মঁদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার পর বেলজিয়ান নম্বর প্লেটধারী পরিত্যক্ত যে দুটি গাড়ি উদ্ধার করা হয় সেগুলো ওই তিন ভাইয়ের দুজনের নামে ভাড়া করা হয়েছিলো।
তাদের একজনকে গত শনিবার ব্রাসেলস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্যারিসে নিহত সাত হামলাকারীর মধ্যে এক ভাই রয়েছেন বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অপর ভাই আবদেস সালাম সালাহকে এখন খোঁজা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাটাক্লঁ কনসার্ট হলসহ ছয়টি স্থানে একসাথে হামলা হয়। দেশটির ইতিহাসে অর্ধশতকেরও বেশি সময়ের ভয়াবহতম এ হামলায় ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৩৪৯ জনের মধ্যে ৯৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর ফ্রাঁসোয়া মলিয়েঁ জানিয়েছেন। ফরাসি কর্তৃপক্ষ হামলাকারী সাতজনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা বললেও হামলার দায় স্বীকার করে দেয়া আইএসের বার্তায় তাদের সংখ্যা আটজন বলা হয়েছে। এ থেকেই একজন পালিয়ে যাওয়ার ধারণা এসেছে।
প্রসিকিউটররা বলছেন, ঘাতক একটি বহুজাতিক গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত। মধ্যপ্রাচ্য, বেলজিয়াম ও সম্ভবত জার্মানিতেও তার যোগাযোগ রয়েছে।
হামলায় জড়িত সন্দেহে বেলজিয়ামে সাতজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল বলেছেন, মৌলবাদ দমনে তাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘বিদ্বেষ ছড়ানো কাউকে আমি বেলজিয়ান মাটিতে চাই না! বেলজিয়ামে তাদের কোনো স্থান নেই,’ এক টুইটে বলেছেন তিনি। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস ডে মাইজেরে বলেছেন, হামলাকারী আরও কয়েকজন পালিয়ে থাকতে পারে এবং ফ্রান্সের মতো জার্মানিও আইএসের হামলার লক্ষ্যবস্তু। এদিকে গতকাল রোববার প্যারিসের পূর্বাঞ্চলীয় মুনথাইও শহরতলীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় কালো রঙের একটি সিয়াট গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্য থেকে তিনটি কালাশনিকভ রাইফেল পাওয়া গেছে। এ গাড়িটিও হামলাকারীরা ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো প্যারিসের জাদুঘর ও থিয়েটারগুলো বন্ধ রয়েছে। শহরের রাস্তা ও মেট্রো স্টেশনগুলোতে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। পর্যটকদের কাছে প্যারিসের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা আইফেল টাউয়ারের কাছে কয়েকজন পর্যটক বলেন, শোকের পাশাপাশি তারা আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন।
‘আমি মনে করি, পুরো ইউরোপের আতঙ্কিত হওয়া উচিত। পরবর্তী টার্গেট জার্মানি হতে পারে, পরবর্তী টার্গেট হতে পারে, আমি জানি না, গ্রেট ব্রিটেন। আমি মনে করি পুরো ইউরোপ, সমগ্র ইউরোপের পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ, বলেন অস্ট্রিয়ান পর্যটক মারকুস হের। নিহত হামলাকারীদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে ফরাসি পুলিশ। ২৯ বছর বয়সী ওমর ইসমাইল মোস্তেফা প্যারিসের দক্ষিণপশ্চিমের একটি শহরের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবা ও ভাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মোস্তেফার বিরুদ্ধে আগেও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিলো পুলিশের হাতে। তার জঙ্গিবাদে ঝোঁকার খবরও পাওয়া গিয়েছিলো। তিনি ২০১৪ সালে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন কি-না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। হামলাকারীদের একজন লাখো শরণার্থীর সাথে মিশে ইউরোপে ঢুকেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত এক হামলাকারী দেহের পাশ থেকে একটি সিরীয় পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে। তিনি গ্রিক দ্বীপ হয়ে গত অক্টোবরে শরণার্থী হিসেবে ইউরোপে ঢোকেন বলে গ্রিস ও সার্বিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গ্রিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসপোর্টটির মালিক ওই ব্যক্তি গ্রিসের লেরস দ্বীপ হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন। ৩ অক্টোবর ছোট্ট একটি নৌযানে করে ৭০ জন শরণার্থীর যে দলটি তুরস্ক থেকে গ্রিসে পৌঁছে সেখানে তিনিও ছিলেন। গ্রিসে প্রবেশের কয়েকদিন পর ওই ব্যক্তি মেসিডোনিয়া থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে সার্বিয়া প্রবেশের সময় নাম নিবন্ধন করেছিলেন বলে রোববার সার্বিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।