চুয়াডাঙ্গায় ফিরেছে হাওয়া বদলের ধকল : যত্মে অসচেনতায় পেয়ে বসেছে রোগ : নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু

কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণের বেশি শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। গত তিন দিনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন আর শিশুদের প্রতি যত্নে বড়দের অসচেতনতার কারণেই প্রতি বছর আবহওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে এ রোগ দেখা দেয়। গোটা শীত মরসুমটা জুড়েই রোটাভাইরাস আর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার দেড় মাস বয়সী ইমরান নামের এক শিশু মারা গেছে। সে চুয়াডাঙ্গা বড়শলুয়ার ইনছান আলীর ছেলে। গতপরশু রাতে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায়। অথচ নিউমোনিয়া রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে দরকার বড়দের সচেতনতা। শীত লাগছে ভেবে লেপ-তোষক দিয়ে ঢেকে রাখতে গিয়ে যেমন ঘামে সর্বনাশ ডেকে আনে, তেমনই চুবিয়ে তেল মাখিয়ে যাচ্ছে তাই মতো করে ঘুমপাড়িয়ে ঘাম শরীরে বসে সর্দিকাশিতে ভোগাতে থাকে। কতোটা সর্দি কাশির পর তাকে নিউমোনিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে চিকিৎসকের নিকট নিতে হবে তাও বোঝেন না অনেক পিতা-মাতাই। সে কারণে চিকিৎসা দিতে বিলম্বের কারণে বহু শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে। কারো কারো মৃত্যুও হয়। যেমন বড়শলুয়ার ইমরান। তাকে পরশু রাতে হাসপাতালে নেয়া হয় মৃতপ্রায় অবস্থায়। তাছাড়া ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের মায়ের দুধ না খাইয়ে অন্য খাবার খাওয়াতে গিয়েও শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেন অনেক মাতা-পিতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে শুধু নিউমোনিয়া নয়, অন্যান্য রোগও ওই শিশুকে পেয়ে বসে।

ডায়রিয়া? চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুরা মূলত রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। শিশুর শরীরে প্রবেশের সুযোগ পায় মূলত নোংরার কারণে। পাত্র যেমন গমর পানি দিয়ে ফুটিয়ে নেয়া দরকার, তেমনই খাবারও হতে হবে টাটকা। রোটা ভাইরাস একবার শিশুর শরীরে বাসা বাঁধলে ও আর মরে না, মারাও যায় না। চিকিৎসায় ডায়রিয়া থেকে উপশম করা গেলেও শিশুকে মাঝে মাঝেই ভুগতে হয় ওই রোগে। ফলে রোটা ভাইরাস থেকে সাবধান। অবশ্য রোটাভাইরাস প্রতিরোধক টিকাও এখন পাওয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগী ধারণ ক্ষমতা মাত্র ১৬। এর মধ্যে ওয়ার্ডে ১৪টি শয্যা। ২টি কেবিন। যে ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতা সাকুল্যে ১৬, সেইওয়ার্ডে গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভর্তি ছিলো ৭২ শিশু। গতকালই ভর্তি হয়েছে ৩১ শিশু। গতকাল ভর্তি শিশুদের মধ্যে ১২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, ১৬ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। বাকি তিন শিশু অন্যরোগে আক্রান্ত। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রায় সব সময়ই উপচে পড়া ভিড়। এরপর যখন বাড়তি চাপ আসে তখন স্বল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে সামলানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া একটি জেলা সদরে শিশু হাসপাতাল না থাকাটাও রাষ্ট্রীয় অবহেলারই নজির। অবশ্য কারো কারো মতে চুয়াডাঙ্গায় শিশু হাসপাতাল করতে না পারাটা চুয়াডাঙ্গাবাসীর ব্যর্থতা। এর দায়ভার এড়াতে পারেন না আমাদের নেতৃত্ব। শুধু কি তাই? চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগী আলাদা করে রাখারও ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই। সংক্রমিত রোগে আক্রান্তদের আলাদা রেখে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করতে না পারার দায় কার? হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির নিশ্চয়!