গাংনীর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রেমিক-প্রেমিকা বিয়ে করে বিপাকে

 

গাংনী প্রতিনিধি: বাল্যবিয়ে করে বিপাকে পড়েছে মেহেরপুর গাংনীর প্রেমিক-প্রেমিকা। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর বিয়ে রেজিস্ট্রি ও অ্যাফিডেভিট হলেও ছেলের পরিবার বলছে এ বিয়ে অবৈধ। অবশ্য মেহেরপুর শহরের কাথুলী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত কাজি অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি হলেও কাজি অফিসের ঠিকানা দেয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গার।

জানা গেছে, গাংনী থানাপাড়ার আস্তুল আলীর ছেলে বাঁশবাড়ীয়া বিএম’র নবম শ্রেণির ছাত্র সজিব মিয়া ও গাংনীর ঝিনেরপুলপাড়ার আব্দুর রহিমের মেয়ে গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তার প্রেমসম্পর্কের জেরে গত ৬ অক্টোবর মেহেরপুর শহরের কাথুলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের সময় নোটারি পাবলিকের অ্যাডভোকেট মুনিরা হাসান মিলি স্বাক্ষরিত বিবাহ সংক্রান্ত একটি অ্যাফিডেভিট জমা দেয়। ওই অ্যাফিডেভিটের কাগজে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এতে সজিবের বয়স ২৩ এবং লাবনী আক্তারের বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মেহেরপুর কাজি অফিসে সম্পন্ন করা নিহাক রেজিস্ট্রারেও বর কনের একই বয়স উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সবিজের জন্মসনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ০৭/১২/১৯৯৭ এবং লাবনী আক্তারের ০২/০৫/২০০১। যা গাংনী পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন থেকে জানা গেছে।

একদিকে নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী অন্যদিকে গাংনী পৌরসভার জন্মসনদ অনুযায়ী তাদের বিয়ের বয়স হয়নি। তাহলে বিয়ের অ্যাফিডেভিট ও নিকাহ রেজিস্ট্রারে কীভাবে বয়স বাড়ানো হলো সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, সজিব ও লাবনী আক্তার জানায়, তারা মেহেরপুর শহরের কাথুলী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছে। অ্যাফিডেডিট সম্পর্কেও তারা জানে না। তবে মেহেরপুর কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করলেও লাবনীর পরিবারকে কাজি অফিস থেকে যে নিকাহ রেজিস্ট্রির কাগজপত্র দেয়া হয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই নিকাহ রেজিস্ট্রারের সত্যায়িত প্রতিলিপির ওপরের অংশে একটি গোল সিল রয়েছে। এতে মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও কাজি অফিস চুয়াডাঙ্গা লেখা রয়েছে। দ্বিতীয় পাতায় স্বাক্ষরের নিচে নামের সিলে রয়েছে মো. মাহবুবুর রহমান নিকাহ রেজিস্ট্রার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কাজি জানান, মেহেরপুরের ওই কাজির বিরুদ্ধে বাল্য ও ভূয়া বিবাহ দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তিনি আইনগত বিষয় থেকে রক্ষা পেতে ভুয়া রেজিস্ট্রি করেছেন। চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে খুঁজলে ওই কাজি ও অফিসের কোনো অস্তিত্ব মিলবে না। ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রির বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মেহেরপুরের ওই কাজি অফিসের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজি মো. পিয়ারুল ইসলামের সহকারী রাসেল জানান, বিয়ে হয়েছে কি-না তা ভলিউম দেখতে হবে। বাল্যবিয়ে দিয়ে অস্বীকার করার জন্যই কি চুয়াডাঙ্গার কাগজপত্র দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন।

এদিকে বিয়ের বিষয়টি সজিবের পরিবার জানতে পেরে মেয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। সজিবের পিতা আস্তুল আলী জানান, ছেলেকে ফুঁসলিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে জোরপুর্বক বিয়ে দেয়া হয়েছে। যেহেতু বাল্যবিয়ে তাই তিনি এ বিয়ে মানেন না। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই অভিযোগ করেন বর সজিব মিয়া। তবে কনে লাবনী আক্তার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে প্রেমসম্পর্ক চলছিলো। এক পর্যায়ে সজিবের জোরাজুরিতেই সে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। সজিবের কয়েকজন বন্ধু মিলে মেহেরপুর কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে তাদের বিয়ে দেয়। বিয়ের পর দু সপ্তাধিক সময় ধরে সজিব তাদের বাড়িতে জামাই হিসেবে যাওয়া আসা করেছে। পরে তার পরিবার জানার পর তাকে আটকে দেয়। বাল্যবিয়ে করে সে অপরাধ করলেও এখন সে সজিবের সাথেই সংসার করতে চাই। এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন বলেন, বাল্যবিয়ে দেয়ার সাথে জড়িত কাজি, মাওলানা, স্বাক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আইন লঙ্ঘণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।