ম্যাচের বাকি ছিলো মাত্র ৫ মিনিট। লুইস সুয়ারেজের কাছ থেকে পাসটা পেলেন ভিয়ারিয়াল বক্সের ঠিক মাঝখানে। দুর্দান্ত ফ্লিকে বলটা উঠিয়ে নিয়ে গেলেন সামনে বাধা হয়ে থাকা ডিফেন্ডার জাউমে কস্তার মাথার ওপর দিয়ে। এরপর নিজে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে ভাসমান বলটাকে ভলি করলেন। ব্যাচ, ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক আলফনসে আরিওলাকে হতভম্ব করে বলটা জড়িয়ে গেল জালে। গোল! উল্লসিত ন্যু ক্যাম্প গ্যালারি। বার্সেলোনা ৩-০ ভিয়ারিয়াল। গোলটা কে করেছেন অনুমান করুন তো? ঠিকই ধরেছেন – নেইমার!
ব্রাজিল ফরোয়ার্ডের দুর্দান্ত এই গোলটি এসেছে আসলে কেকের ওপরের ক্রিম হয়েই। এই গোলের আগে দ্বিতীয়ার্ধের ১৫ মিনিটে আরেকটি গোল করেছেন নেইমার। আর তাঁর দুই গোলের মাঝে বার্সার অন্য গোলটি কে করেছেন সেটাও এতক্ষণে অনুমান করতে পারার কথা – সুয়ারেজ।
গত কয়দিনে অনেক ব্যবহারে গল্পটা এখন একটু ক্লিশেই হয়ে যাচ্ছে – ‘মেসিহীন বার্সার জয়রথ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সুয়ারেজ ও নেইমার’। আজও ভিন্ন কিছু হলো না। মেসিহীন প্রথম ম্যাচে সেভিয়ার কাছে হারের পর লিগে বার্সার টানা চতুর্থ জয়টা এল এই দুজনের পায়ে ভর করেই।
অবশ্য প্রথমার্ধ শেষে একটুও মনে হয়নি, ভিয়ারিয়াল এমন ব্যবধানে হারবে। স্প্যানিশ ফুটবলের কৌশলের প্রদর্শনী দেখিয়ে দুদলই লড়ে গেছে প্রায় সমানে-সমানে। এর জন্য একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য ভিয়ারিয়ালের। বার্সার ঘরের মাঠে এসে শেষ কবে কোনো দল এমন প্রেসিং করে খেলেছে সেটা রীতিমতো গবেষণারই বিষয়। ‘ইয়েলো সাবমেরিন’রা এর পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারত প্রথমার্ধেই। বার্সা লেফট ব্যাক জর্ডি আলবার ভুলে ৪৫ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন সামু কাস্তিলেয়ো। তবে ভিয়ারিয়াল উইঙ্গারের শটটা ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো।
সুযোগ পেয়েছিল বার্সাও। ২৭ মিনিটে দারুণ প্রতি-আক্রমণ থেকে নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে শট করেছিলেন বার্সা ডিফেন্ডার ম্যাথিউ। কর্নারের বিনিময়ে সেটি ঠেকিয়ে দেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক। এর আগে-পরে অবশ্য বেশ কয়েকটি হাফ-চান্স ছিল দুদলেরই।
বিরতির পর অবশ্য চেনা ছন্দে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বার্সা। চার মিনিটের মধ্যেই প্রথম গোলটা পেয়ে যেতে পারত। নেইমার ক্রস থেকে দানি আলভেজের শটটা ঠেকিয়ে দিলেন ইয়েলো সাবমেরিন গোলরক্ষক আরিওলা। অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়নি বার্সাকে। ৬০ মিনিটে সার্জিও বুস্কেটসের থ্রু থেকে ভিয়ারিয়াল বক্সে বল পেয়ে যান নেইমার। ছোট্ট একটা ডজে ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষককে হতবুদ্ধি করে বলটা জালে পাঠিয়ে দিতে কোনো ভুল হলো না সম্ভবত জীবনের সেরা ফর্মে থাকা এই ব্রাজিলিয়ানের।
নেইমার গোল করেছেন, সুয়ারেজ বসে থাকবেন কেন! তিনিও গোল করলেন দশ মিনিট পর। অবশ্য পেনাল্টি থেকে। বার্সা উইঙ্গার মুনির এল হাদ্দাদিকে বক্সে ফেলে দিয়ে নিজে হলুদ কার্ড দেখার পাশাপাশি বার্সাকে পেনাল্টি উপহার দেন জাউমে কস্তা। অবশ্য ৬৪ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও ইনিয়েস্তা সুযোগটা নষ্ট না করলে ব্যবধান আরও বড় হতে পারত। তবে ৮৫ মিনিটে নেইমারের অসাধারণ গোলটিতে সব আক্ষেপ মুছে যাওয়ার কথা বার্সার।
লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচে হাঁটুতে চোট পেয়ে মেসি মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার পর থেকে আজকের ম্যাচ পর্যন্ত এ নিয়ে ২০ গোল হলো সুয়ারেজ ও নেইমারের। আন্তর্জাতিক ম্যাচের বিরতির পরই বার্নাব্যুতে এল ক্লাসিকো। তাতে মেসি থাকবেন কি না এনিয়ে সন্দেহ আছে অনেক। তবে এমএসএনের বাকি দুজন যে ফর্মে আছেন, তাতে কোচ লুইস এনরিকে ভাবতেই পারেন – ‘নো মেসি, নো প্রবলেম।