স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড় কাণ্ডের ১৩ মাসের মাথায় ত্রিপুরায় ধরা পড়লো জেএমবি জঙ্গি জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২)। তার পরিকল্পনা ছিলো সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে ঢুকে নাশকতা চালিয়ে ফের ভারতে পালিয়ে আসার। ধরা পরার পর প্রথম জেরায় এমনটাই জানিয়েছে জাহাঙ্গীর। পাশাপাশি স্বীকার করেছে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় সে যুক্ত ছিলো। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। ত্রিপুরায় সে জঙ্গি হামলা ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলো।
ত্রিপুরা পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজ্যের সিপাহীজালা জেলার যাত্রাপুর থানা এলাকার হেমায়েতপুর গ্রাম থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়। নিজের পরিচয় যাতে প্রকাশ না পায় এ জন্য বাড়িওয়ালার মেয়েকে বিয়ে করেছিলো সে। গত এক বছর ধরে সেখানেই থাকছিলো। কয়েকদিন আগে পুলিশের কাছে খবর আসে কিছু অপরিচিত লোক জাহাঙ্গীরের বাড়িতে যাতায়াত করছে। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি শুরু করে। খবর দেয়া হয় ভারতের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-এনআইএ’কে। নজরদারি চালিয়ে এবং দুজনকে আটক করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে জাহাঙ্গীর বর্ধমান নাশকতার সাথে যুক্ত। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যাত্রাপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরকে ত্রিপুরার সোনামুড়া আদালতে তোলা হলে তাকে ৭ দিনের জন্য রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রিমান্ডে নিয়ে তাকে জেরাও শুরু করেছে এনআইএ। জেরায় জাহাঙ্গীর জানিয়েছে, তার পরিকল্পনা ছিলো বাংলাদেশে হামলা চালানোর। সেই জন্য নতুন করে সঙ্গী-সাথীদের সাথে যোগাযোগ করছিলো। জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের কোথায়, কিভাবে হামলার পরিকল্পনা করেছিলো তা জানার চেষ্টা করছেন এনআইএ’র গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে ২ জনের মৃত্যু হয়। পরে জানা যায়, বাংলাদেশ জুড়ে সিরিজ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি ঘাঁটি গড়েছিলো জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ তথা জেএমবি। উদ্দেশ্য ছিলো শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়ে শরীয়ত পরিচালিত ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ ঘটনার তদন্তে নেমে নারায়ণগঞ্জের সাজিদসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
পরবর্তীতে আদালতে চার্জশিট দিয়ে এনআইএ জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৪ জেলা বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ ছাড়াও আসাম ও ঝাড়খণ্ডে একাধিক জঙ্গি শিবির খুলেছিলো জেএমবি। সেখানে গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ ছাড়াও দেয়া হতো অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ। সেখানে ইতোমধ্যে অন্তত ৫০০ জন জেহাদী প্রশিক্ষণ পেয়েছে। নারীদের জন্যও খোলা হয়েছিলো আলাদা শিবির। বলা হয়েছিল বাংলাদেশি নাগরিক তালহা শেখ, কাউসার ও সাহাদাত শেখ ওরফে নাসিরুল্লাসহ এ ঘটনায় যুক্ত ৮ জঙ্গি এখনও পলাতক। এরা বাংলাদেশে ঢুকে লুকিয়ে থাকতে পারে।
এদিকে এনআইএ’র হাতে গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি সাজিদ ওরফে রহমতুল্লা জেরায় জানিয়েছিলো, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে সরানো যাবে না-এটা বুঝতে পেরেই জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিলো। সে জন্য বর্ধমানসহ পশ্চিমবঙ্গের আরো কয়েক জায়গায় শিবির করে শুরু হয় বোমা ও গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ। তাদের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশে ঢুকে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো, বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা। এজন্য ১৫০ জন নারীকে জঙ্গি প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। এখন ত্রিপুরায় আটক জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে নতুন করে সেই পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা হচ্ছিলো কি-না, ভারতীয় গোয়েন্দারা তা-ই খতিয়ে দেখছেন।