মাঝরাতে পুলিশ দেখে চমকে উঠলো জুব্বার

স্টাফ রিপোর্টার: মাথাভাঙ্গা কার্যালয়ের সামনে থেকে সাংবাদিকের সাইকেল চুরি করে থলেনদার শেরেগুলের হেফাজতে রেখে নিশ্চিন্তেই ঘুমোচ্ছিলো চোর আব্দুল জব্বার ওরফে জুব্বার। গত মঙ্গলবার মাঝরাতে জব্বারের বাড়িতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই আবু জাহের সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাজির হলে চমকে ওঠে সে। ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে পুলিশকেই উল্টো প্রশ্ন করলো, কী হয়েছে, আমি কী করেছি? পুলিশ তার সামনে মেলে ধরলো সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া চুরির সময়ের কয়েকটি ছবি। এরপর কি আর মুখে কথা থাকে? সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত চুরির দৃশ্য অংশবিশেষ দেখে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে এসআই আবু জাহের ভূইয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গত পরশু মঙ্গলবার দিনগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে গ্রেফতারের পরপরই জুব্বারের কাছে জানতে চাওয়া হয় চুরি করা সেই বাইসাইকেলটি কোথায়? সে জানায়, একই পাড়ার শেরেগুলের কাছে। অবাক হলেও সত্য যে, শেরেগুলকে পুলিশ ধরতে তেমন আগ্রহীই হয়নি। কেন? প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েও পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। অবশ্য পুলিশ বাইসাইকেলটি সকালেই উদ্ধার করে। সাইকেলটি শেরেগুলের ডেরা থেকে উদ্ধার করা হলেও বলা হয়, আব্দুল জুব্বারের বাড়ির লোকজনই বাইসাইকেলটি থানায় পৌঁছে দিয়েছে। চুরির সময় ক’জন ছিলো? আরো দুজন ছিলো ঠিকই। তাদের ধরতেও পুলিশের তেমন আগ্রহী হতে দেখা যায়নি। কেন? পুলিশের তরফে বলা হয় রাজনৈতিক চাপ আছে। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, পুলিশ নিশ্চয় পয়সা খেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করছে। চুয়াডাঙ্গার ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা আর যাই হোক চোর বা চোরের থলেনদারের পক্ষ নেবে না।

গত ১ নভেম্বর রাত ১০টা বেজে ২৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক মারুফ হাসান বাইসাইকেলযোগে দৈনিক মাথাভাঙ্গার ফেরিঘাট রোডস্থ প্রধান কার্যালয়ে আসেন। তিনি সোয়া ১১টার দিকে অফিস থেকে নিচে নেমে দেখেন তার বাইসাইকেলটি নেই। তালা মেরে রাখা সাইকেলটি গেলো কোথায়? রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় জিডি করা হয়। এরপর দেখা হয় প্রধান কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ। চোর এলো, কয়েকবার ঘুরলো। পাক মারলো। বিড়িতেও টান দিলো দাঁড়িয়ে কয়েকবার। কয়েকজন পথচারীর সাথে কথাও বললো। ঠিক রাত যখন ১০টা ৪৯ বাজে তখন চোর সাইকেলটি দ্রুত সরিয়ে নিলো। এ দৃশ্য দেখে পুলিশকে জানানো হলো। ফুটেজের ছবি দেখে চোরের পরিচয় উন্মোচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। চোরের পরিচয় জানতে লেগে যায় পুরো একদিন। ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার আব্দুল খালেকের বাড়িতে অভিযান শুরু করেন। ধরা পড়ে আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুল জুব্বার। দিনে মাঝে মাঝে কাঠমিস্ত্রির কাজ করলেও চকচকে ভদ্র পোশাকে ঘুর ঘুর করে শহরের অলিতে গলিতে। সুযোগ বুঝে চুরি করে। টার্গেট থাকে সাইকেল। ধরা পড়লে দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা, পুলিশ যাতে না মারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব ওই থলেনদারের। গতপরশু রাতে জুব্বার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরপরই শেরেগুলের নাম বলে। অথচ পুলিশ রহস্যজনক কারণে সেদিকে এগুতেই চায়নি। পরে জুব্বারের স্বীকারোক্তিতে বাইসাইকেলটি সদর থানায় নেয়া হয়। দুপুরে বাইসাইকেলটি সাংবাদিক মারুফ হাসানের নিকট ফেরত দেয়া হয়। অপরদিকে আব্দুল জুব্বারকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে আরো চুরির অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানোর প্রক্রিয়া করা হচ্ছে বলে জানিয়ে পুলিশ বলেছে, ওর সহযোগীদেরও ধরা হবে। তবে একটু সময় দিতে হবে।