মহেশপুর প্রতিনিধি: দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহিন আলমের উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশা থাকলেও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। আমি অন্ধ দু চোখে দেখতে পাই না। তারপরও সবার সহযোগিতা পেলে আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। বাবা দিনমজুর। লোকের জমিতে কাজ করে। প্রতিদিন যে মজুরির টাকা পায় তা দিয়ে চলে আমাদের ৪ জনের সংসার। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে (কলা অনুষদে) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখন টাকার প্রয়োজন। তাই সবার সহযোগিতা পেলে আমি ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহিন আলম।
শাহিন আলম জানান, জন্মের ৩ বছর পর টাইফয়েড হওয়ার কারণে আমার দুটি চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আমার লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা ছিলো। তাই ৬ বছর বয়স হলে সমাজসেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় আমাকে নড়াইল জেলার তুলারামপুরের একটি শেল্টারহোমে রেখে তুলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। জিপিএ ৪ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করে মহেশপুর উপজেলার বিদ্যাধরপুর শামছুল হুদা খান কলেজে ভর্তি হই। কলেজের শিক্ষকরা আমাকে লেখাপড়ায় সকল ধরনের সুযোগ করে দেন। তাদের সহযোগিতায় এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৮ পয়েন্ট পেয়ে পাস করি। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে খ ইউনিটে (কলা অনুষদে) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি চোখে না দেখলেও লেখাপড়া করা ও পরীক্ষা দেয়ার সময় শিক্ষক ও শিক্ষাবোর্ডের অনুমতি নিয়ে শ্রুতিলেখক দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। শাহিন আলম আরও জানান, মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান আমাকে ভর্তি হওয়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এখনও অনেক অর্থের প্রয়োজন। শাহিন আলমের বাবা আব্দুল কাদের জানান, আমার দুটি ছেলে, বড় ছেলে সুজন মাহামুদ ঢাকা কলেজে অনার্সে লেখাপড়া করছে। ছোট ছেলে শাহিন আলম ৩ বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। ৬ বছর বয়সে সমাজসেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় সে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। শামছুল হুদা খান কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম শাহ্ আলম জানান, শাহিন আলম আমাদের কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার বেতন ফ্রি ছিলো। সেই সাথে আমরা তার বই, খাতা, কলম ফ্রি দিয়েছি, এমনকি তার অন্য বইয়ের প্রয়োজন হলে কলেজের সবাই মিলে বাইরে থেকে তার বই এনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। বর্তমানে তার পরিবার উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্থের যোগান দিতে পারছে না। শাহিনের উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশা মাঝ পথেই শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের দোয়া ও সহযোগিতার কামনা করেছে।