স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল রোববার। ঘড়ির কাঁটা তখন বলছে, বেলা সাড়ে ১১টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষক কোয়ার্টারের গাড়ি বারান্দা। কাফনের কাপড় পরে শুয়ে থাকা ফয়সাল আরেফীনকে দেখতে বহু মানুষের ভিড় সেখানে। এতো মানুষের ভিড় ঠেলে একটা সময় স্বামীর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেন স্ত্রী রাজিয়া রহমান। বললেন, ‘প্রমিজ করছি, আমি আসব, তুমি তো আমাকে ছাড়া থাকতে পার না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক রাজিয়া রহমান। গতকাল শনিবার সুফিয়া কামাল হলের কোয়ার্টার থেকে স্বামীকে বিদায় দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী ফিরলেন লাশ হয়ে। মর্গে সকালে ফয়সাল আরেফীনের ময়নাতদন্ত চলছিলো। চিকিৎসকেরা খতিয়ে দেখছিলেন মৃত্যুর কারণ। কটি আঘাত, কোথায়, আঘাতের কতোক্ষণ পর মৃত্যু হলো এই সব। আর রাজিয়া-ফয়সাল দম্পতির বড় ছেলে তখন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে। মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর মিনিট কুড়ি পরে স্বামীকে দেখতে আসেন স্ত্রী রাজিয়া। স্বামী কথার উত্তর আর কোনো দিন দিতে পারবেন না। তবু অনর্গল বলে চলেন রাজিয়া, ‘তুমি তো খালি রাগ করো। দু দিন পর পর রাগ করো। এই যে সেদিন রাগ করে চলে গেলা। আবার তো আসছ। আমি তো জানি, তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পার না। আমি আসবো। বলছিলা না এবার বই মেলার পর বাবা-মা সবাই মিলে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে যাবো। তুমি আমাকে ছেড়ে কীভাবে থাকবা? আমরা সবাই আসবো। প্রমিজ।’
রাজিয়া যখন কথা বলে চলেছেন, তখন ফয়সালের পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাসেম ফজলুল হক ছেলের মৃতদেহের সামনে বসে আছেন চেয়ার নিয়ে। গত শনিবার ছেলের কার্যালয়ের দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন তিনি। পুলিশ, সাংবাদিকের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। রাত একটা পর্যন্ত ছেলের মরদেহ নিয়ে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজমর্গে। সকালে মর্গ থেকে ময়নাতদন্তের পর ছেলেকে সাথে করে বাড়ি ফিরেছেন। একটা সময় ফয়সালের বৃদ্ধা মাও নেমে আসেন। তিনিও এসে বসেন প্রিয় সন্তানের পাশে। কতো অভিমান সবার মধ্যে! সব অভিমান যেন ফয়সাল আরেফীনের কাছে। স্বজনদের মধ্য থেকে কেউ একজনকে ধরে নিয়ে আসা হলো। তিনি কিছুতেই দেখবেন না ফয়সালকে। চিৎকার করে শুধু বললেন, ‘না আমি দীপন ভাইকে দেখবো না। আমি কিছুতেই দেখবো না ওকে।’
এদিকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সোজা বাবার জানাজায় অংশ নিতে ছুটে গেল ফয়সল আরেফিন দীপনের বড় ছেলে রিদাদ। উপস্থিত সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে বলল, সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। আমার বাবা জান্নাতবাসী হবেন।
জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার বেলা পৌনে৩ টায় আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও লেখক, প্রকাশক বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জোহরের নামাজের পর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।