স্টাফ রিপোর্টার: নবসৃজিত ৫৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পতাকা তুলে যাত্রা শুরু করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বিজিবিএম পিএসসিজি। গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণের পর যখন পতাকা তুলে ও ঘোষণা দিয়ে একটি নতুন ব্যাটালিয়নের শুভ সূচনা করার সাথে সাথে ৬ বিজিবির সদর দফতর চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের সজ্জিত বিশাল প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশে উড়তে শুরু করে শান্তির প্রতীক পায়রা, আর পতাকা রঙের অসংখ্য লাল সবুজ বেলুন। সজ্জিত আকাশ আর সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মাতোয়ারা আয়োজকদের সাথে সাথে উপস্থিত অতিথিরাও আবেগাপ্লুত হয়ে করতালিতে মুখরিতো করে তোলেন। পূর্ণতা পায় ব্যাটালিয়ন উদ্বোধনের আয়োজন।
চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরস্থ ৬ বিজিবি প্যারেডগ্রাউন্ডে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও নবসৃজিত ৫৮ বর্ডার গার্ডের সদর দফতর হচ্ছে মূলত ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের খালিশপুরে। ২৫ একর জমির ওপর অবকাঠামো ইতোমধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত প্রহরায় বর্ডার গার্ড সদস্যরা শুধু প্রশংসনীয় অবদানই রাখছেন না, প্রয়োজনে দেশের আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কাজে নিয়োজিত হয়েও প্রশংসার দাবিদার হয়েছে। এরকম একটি সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্ববোধ করি। একই সাথে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনিই দেশের প্রয়োজনে এ বছর নতুন ৪টি রিজিওন, ৪টি সেক্টর ও ১১টি ইউনিট চালুর অনুমোদন দিয়েছেন। সীমান্তে যোগাযোগের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নবগঠিত ব্যাটালিয়নের সকল সদস্য দেশের কল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মেজর মো. মেহেদী। ৫৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের একটি চৌকস দল মনোজ্ঞ প্যারেড প্রদর্শন করে। উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, দক্ষিণ পশ্চিম রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান পিবিজিএম, কুষ্টিয়া সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল হ্লা হেন মং, খুলনা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. খলিলুর রহমান পিএসসি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, ঝিনাইদহ জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মো. মহিউদ্দিন খাঁ, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, সিভিল সার্জনসহ ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন যশোর, রিজিয়নের অধীনস্থ ঊর্ধ্বতন সামরিক এবং চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার বেসামরিক কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন চুয়াডাঙ্গাস্থ ৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্ণেল মনিরুজ্জামান বিজিবিএম। অতিথিদের স্বাগত জানান অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আনোয়ার জাহিদ। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে প্যারেড দলের আলোকচিত্র গ্রহণ, চা চক্র, মহাপরিচালকের দরবার এবং প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। চা চক্রে সাংবাদিকদের সাথে খোলামেলা আলোচনায় মিলিত হন বিজিবির মহাপরিচালক। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বলেন, দেশে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে। রায় হচ্ছে। রায় কার্যকরও করা হচ্ছে। এর মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি করে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় বানচাল করার জন্য বিদেশি ও মুক্তমনের মানুষ হত্যা করছে বলে প্রাথমিকভাবে আমার ধারণা। তা ছাড়া দেশে আইএস আছে বলেও মনে হয় না। কারণ তদন্তকারীরা তদন্তে পেয়েছে, যেসব স্বীকারোক্তমূলক বিবৃতি ইন্টানেটে দেয়া হয়েছে তা দেশেরই কোনো না কোনো এলাকায় বসে আপলোড করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো নারী সদস্য যুক্ত করা হচ্ছে। আজই ১ নভেম্বর থেকেই শূরু হয়েছে নারী সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রথমে ৫০ জন নারীকে নিযুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে নেয়া হবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী সদস্য। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বিজিবিএম, পিএসসিজি বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি’র কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্যই বিজিবি ব্যাটালিয়নের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ কারণেই ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরু করা হলো। এ ব্যাটালিয়নের কার্যক্রমের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিএসএফ’র সাথে তারতম্য কিছুটা হলেও কমে আসবে। ভারতে প্রতি ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যে একেকটি বিএসএফ ক্যাম্প। আর বাংলাদেশে সেটা ২০-২৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে হওয়ায় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমান্তবর্তী এলাকার সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে অচিরেই সীমান্তে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং সীমান্তে বিজিবি’র কার্মকাণ্ডে আরো গতিশীলতা পাবে। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বর্ডারহাট স্থাপনের কাজ চলছে। দু দেশের অবস্থানের সমন্বয় ঘটলে এ জেলায় বর্ডার হাট চালু হয়ে যাবে। এছাড়া আলোকিত সীমান্ত প্রকল্পের কাজের কিছুটা জটিলতা থাকায় চুয়াডাঙ্গায় এটার কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের সদিচ্ছার কারণে সেদেশ থেকে অবৈধ ফেনসিডিল ও মাদকের পাচার কমে আসছে। তারাও চাচ্ছে এটা নিয়ন্ত্রণ হোক। এ ছাড়া অবশ্য সীমান্তবাসীকে সচেতন করতে, দেশের প্রতি দরদী করতে তথা দেশাত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে সাংবাদিকদের কলম ধরা দরকার। দরকার সচেতনতা সৃষ্টিতে নব জাগরণ।