সমাজের সর্বনাশ হওয়ার আগেই রুখতে হবে অন্যায়

শিশুসন্তানের নালিশ শুনে যে পিতা অন্যের শিশুসন্তানকে মারধর করেন সেই পিতাকে বিবেকহীন বললে বোধ করি, কমই বলা হয়। যে মানুষের বিবেক ঘুমিয়ে, তার বিবেক জাগিয়ে তোলার মতো উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার দাবি ন্যায় প্রতিষ্ঠারই তাগিদ, অবশ্যই অযৌক্তিক নয়।

একজন পুরুষ পিতা হওয়ার পর যেমন উপলব্ধি করতে পারেন তিনি যার সন্তান তার কাছে কতোটা আদরের, কতোটা প্রিয়। আর পরের সন্তান? সকল সন্তানই তার পিতার কাছে যেমন আদরের, তেমনই সকল পিতাই তার সন্তানের কাছে নিরাপত্তার প্রতীক। শিশুকালে ঘরে বাইরে শিশুরা তো শিশুসূলভ আচরণ করবেই। বেঞ্চে বসা নিয়ে তাদের মধ্যে খুনসুটি শিশুসুলভ আচরণেরই অংশ। আমাদের সমাজের বাস্তবতায় হাতাহাতিও অস্বাভাবিক বলা যায় না। কারণ, শিশুদের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষালয় সেই শিক্ষালয় অর্থাৎ নিজের বাড়ি, পরিবার থেকেই সকল শিশুকে হিংসামুক্ত মানসিকতার করে তুলতে পারছি না। এই না পারার আড়ালে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই অজান্তে লুকিয়ে রয়েছে শিশুদের সামনে বড়দের আচরণগত সমস্যা। কারো কারো মতে এ সমস্যা বাঙালির একান্তই নিজের।

মেহেরপুর গাংনীর হাড়ভাঙা ডিএইচ সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার প্রথম শ্রেণির দু সহপাঠীর মধ্যে বেঞ্চে বসা নিয়ে মতোবিরোধ দেখা দেয়। কথা কাটাকাটিও হয়। হতে পারে আরও একটু বেশি কিছু। হয়তো দু শিশুই বাড়ি ফিরে তাদের পিতার কাছে নালিশ করেছে, হয়তোবা একজন নালিশ করেছে, অপরজন করেনি। যে নালিশ করেছে তার যেমন পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তেমনই তার পিতা যেভাবে বিদ্যালয়ে ছুটে এসে শ্রেণিকক্ষেই অন্য কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সামনে এক শিশুকে মারধর করেছেন তা দেখে হিংস্রতার হেতু খুঁজে পেশিশক্তি নিপাতের দাবি উঠতেই পারে। উঠেছেও। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিভাবক শরিফুল ইসলাম যা করেছেন তা বিবেকহীন। বিবেক জাগিয়ে তোলার মতো উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সোচ্চার স্থানীয় সচেতনমহল।

নিজের সন্তান যখন আব্বু বা বাবা বলে ডাকতে শেখে মূলত তখনই একজন পিতা উপলব্ধি করতে পারেন তিনি যখন অন্যের সন্তান তখন তার কাছে কতোটা প্রিয়। নিজের সন্তান যখন নিজের কাছে প্রিয়, তখন অন্যের সন্তানও। সকল শিশুই হিংসামুক্ত মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠার দাবি রাখে। সুপ্ত এ দাবি- জাতি তথা সমাজের জন্যই। দরকার শুধু উপলব্ধি করে শিশুদের প্রতি সকলের যত্নবান হওয়া। যে পিতা বা অভিভাবক শুধু নিজেরটা বোঝেন, তার বিবেক জাগিয়ে তুলতে হবে সমাজের স্বার্থেই। মূলত সে কারণেই বিবেকহীন ব্যক্তির বিবেক জাগিয়ে তোলার মতো উপযুক্ত শাস্তিমূলক শিক্ষা অনিবার্য। তা না হলে সমাজে অভিন্ন মানসিকতার অভিভাবক বেড়ে যাবে। যার খেসারত সমাজকেই দিতে হবে।

ঘরে-বাইরে পথে-ঘাটে বা শিক্ষালয়ে বড়দের বিবেকহীন হিংস্রতায় কোমলমতি শিশুদের মানসপটে পড়বে হিংসার ছাপ। দুর্বল অথবা সচেতনতায় কাবু পিতাও সন্তানের নিরাপত্তা প্রশ্নে পেশিশক্তি প্রয়োগের পথে হেঁটে ডেকে আনবেন সর্বনাশ। ফলে রুখতে হবে অন্যায়।