গাংনী প্রতিনিধি: নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করাতে বাদীর সাথে থানায় এসেও শেষ রক্ষা হয়নি মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা ডিএইচ ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের। তার সামনেই প্রথম শ্রেণির ছাত্রকে নির্মম নির্যাতন ও হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার গাংনী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল সকালে মাদরাসার সামনের সড়কের পাশে মানববন্ধন করেছেন ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী। নির্যাতনের শিকার শিশু ইসমাইল হোসেনের পিতা মুছাব আলী বাদী হয়ে দায়ের করা মামলার আসামি হাড়াভাঙ্গা গ্রামের সেই হামলাকারী শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফুল কসাই, তার ভাই আলমগীর হোসেন ও অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক।
এদিকে শিশু ইসমাইলের ওপর হামলার ঘটনায় এলাকাজুড়ে বইছে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদেরকে পিতা-মাতার স্নেহ-আদরে রাখার কথা শিক্ষকদের। কিন্তু সেই শিক্ষকদের সামনে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলাকে শিক্ষকদের ব্যর্থতা ও অমানবিক আচরণ বলে আখ্যায়িত করেছেন এলাকার মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষকরা কী হামলাকারীদের ভয় পান? নাকি পরের ছেলে বিধায় প্রতিবাদ করেননি, এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। অপরদিকে হামলাকারী শরিফুল কসাইকে নিয়েও নানান অভিযোগের বানে বিদ্ধ হচ্ছেন শিক্ষকরা। এতোটুকু বয়সের শিশুকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা শুধু চরম ধৃষ্টতাই নয় চরম অমানবিকতা এবং বিবেকহীন নির্দয়ও।
এদিকে গতকাল মাদরাসার সামনে যখন মানববন্ধন চলছিলো ঠিক সেই সময়েই থানায় মামলা দায়ের করতে যান নির্যাতনের শিকার শিশুটির পিতা। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তাদের সাথে থানায় যান মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। তবে তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি কৌশলে থানা থেকে সঁটকে পড়েন। তারপরও রক্ষা পাননি তিনি। মামলার এজাহারে তাকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে। শিশুটির পিতা মুছাব আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মাদরাসার মাস্টারদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম ইসমাইলকে। বলেছিলাম মানুষ করে দেবেন। কিন্তু শিক্ষকরা ব্যর্থ হয়েছেন। হামলাকারী দু সহোদর ও অধ্যক্ষের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, মামলা দায়েরের আগেই আব্দুর রাজ্জাক থানা থেকে সঁটকে পড়েন। তবে রেহাই নেই। গতকাল তিনজনের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত অভিযান অব্যহত রয়েছে। মামলাটি দ্রুত তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি যেকোন মূল্যে আসামি গ্রেফতারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ওই মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন ও সায়েম হোসেনের মধ্যে গত বুধবার শ্রেণি কক্ষে বেঞ্চে বসা নিয়ে গণ্ডগোল বাধে। এক পর্যায়ে সায়েমের পিতা আলমগীর ও চাচা শরিফুল কসাই মাদরাসায় ঢুকে ইসমাইলকে বেধড়ক মারপিট করে।