স্থানীয় নির্বাচন: দল বাড়ার ইঙ্গিত বাড়তে পারে ডিগবাজ প্রার্থীও

স্টাফ রিপোর্টার: দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর অংশ নেয়ার ইঙ্গিত মেলার পাশাপাশি ‘ডিগবাজ’ প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আসন্ন পৌর নির্বাচনে কাস্তে প্রতীকে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি স্থানীয় নির্বাচন দলভিত্তিক করার সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এলেও নির্বাচনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সেই সাথে নতুন নিবন্ধিত দলও প্রথমবারের মতো প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দু বছর আগে দশম সংসদে ১২টি দল অংশ নিলেও দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনে নিবন্ধিত অনেক দল অংশ নেবে বলে তারা মনে করছেন। আর সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী আইনে কোনো দলের প্রার্থী হতে ওই দলে তার তিন বছরের সদস্য পদ থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়ায় স্থানীয় নির্বাচনেও ‘ডিগবাজদের’ প্রভাব থাকবে। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে অন্য দল থেকে প্রার্থী হবেন অনেকে।

প্রার্থী হতে আগে থেকে দলের সাথে থাকার বাধ্যবাধকতা যে থাকছে না তা নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের কথা স্পষ্ট হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে দলের সাথে তিন বছর সম্পৃক্ততার বিধি তুলে দেয়ায় স্থানীয় নির্বাচনেও ওই বাধ্যবাধকতা রাখার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নাই, বিষয়টি দলই দেখবে বলেন তিনি। এ সুযোগ নিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর কেউ কেউ মনোনয়ন বাণিজ্য করতে পারে বলেও ইসি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করছেন। এ শঙ্কা প্রকাশ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফুর রহমান বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে অনেকেই মনোনয়ন বাণিজ্য করবে।

আবার যেসব দল সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারে না, সেসব দল স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার নামে সব জায়গায় দলের প্যাডকে কাজে লাগাতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন এবং আগামী বছরের শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার পথ খুলেছে। এ লক্ষ্যে আইন সংশোধনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে।এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ কিংবা আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াও চলছে।

জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, এখন সব কিছু সংশোধিত অধ্যাদেশ বা আইনের ওপর নির্ভর করছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংশোধিত অধ্যাদেশ আইনটি হাতে পেলেই দ্রুত সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যেও এ সংক্রান্ত আইন পেলে দলীয়ভিত্তিতে ভোট করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিপক্ষে বিএনপির অবস্থান হলেও আসন্ন পৌর নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন বলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনমুখী দল। আমরা এ নির্বাচনে অংশ নেব। তবে আইন সংশোধনের জন্য সব দলের মতামত নেয়া দরকার ছিলো। এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বাম দল সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর আহমেদ ঘোষণা দেন, বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিপিবির প্রার্থীরা কাস্তে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, আমরা দশম সংসদে অংশ নিইনি। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেব। কোনোভাবে যত্রতত্র প্রার্থী দেয়ার নামে মনোনয়ন বাণিজ্য হতে দেবো না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে নির্বাচন কমিশন। দশম সংসদ পর্যন্ত নিবন্ধিত দল ৪০টি। এর বাইরে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল এবং জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালতে অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। তবে সব দল নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা অপেক্ষকৃত কম হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ  নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলগুলোর জোটগতভাবে নির্বাচন করার সুযোগ রাখা হবে। অনেকে মনোনয়ন দাখিল করলেও প্রত্যাহারের সময় পার হলে চূড়ান্ত প্রার্থী কমে যাবে।