পবিত্র আশুরার তাত্পর্য ও শিক্ষা

আরবি ‘আশরুন’ একটি সংখ্যাবাচক শব্দ। যার অর্থ দশ। আর এ ‘আশরুন’ থেকেই এসেছে  ক্রমবাচক শব্দ ‘আশুরা’ যার অর্থ দশম। আরবি বা হিজরি বর্ষপঞ্জির পয়লা মাস মহররমের ১০ তারিখকেই বলা হয় আশুরা। এ দিনে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি জগতে বহু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনা প্রবাহের মধ্যে এ দিনে লওহে মাহফুজ ও প্রাণিকুলের প্রাণ সৃষ্টি, দুনিয়ার সমস্ত সমুদ্র-মহাসমুদ্র ও পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি, হজরত আদমের (আ.) বেহেশতে প্রবেশ ও দুনিয়ায় প্রেরণ, হজরত নূহের (আ.) আমলে মহাপ্লাবনের অবসান, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিমের (আ.) জন্ম ও স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানির হুকুম, হজরত ইউনুসের (আ.) মত্স্যগর্ভ হতে মুক্তিলাভ, হজরত আইয়ুবের (আ.) রোগমুক্তি, হজরত মুসার (আ.) মুক্তি ও নীলনদে ফেরাউনের সলিল সমাধি, হজরত ঈসার (আ.) জন্ম অন্যতম। তবে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররমে কারবালার প্রান্তরে রাসুলুল্লাহর (স.) দৌহিত্র ইমাম হুসাইনের (রা.) মর্মান্তিক শাহাদাত বরণ এ দিনটিকে দান করেছে নতুন মাত্রা। আবার এ দিনেই হবে কিয়ামত বা মহাপ্রলয়। তাই সবদিক দিয়েই আশুরার তাত্পর্য অপরিসীম।

উপরোক্ত ঘটনাবলী হতে বোঝা যায়, পবিত্র আশুরা যেমন আনন্দের দিন, তেমনি বেদনারও দিন। একই কারণে আশুরা মানে কেবল ‘কারাবালা’ নয়। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবেই আশুরার গুরুত্বকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। মহান ও পবিত্র এ দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষত ইমাম হুসাইনের (রা.) শাহাদাতবরণের ঘটনা সকলের জন্যই শিক্ষণীয়। অসম যুদ্ধ হলেও অন্যায় ও অসত্যের নিকট তিনি ও আহলে বায়েতগণ মাথা নত করেননি। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আপস করেননি। ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত ও অত্যাচারিত, তবু ইসলামের ঝাণ্ডাকে সমুন্নত রেখেছেন। কারাবালার এ ত্যাগ ও মহিমা এ জন্যই চিরভাস্বর। অন্যদিকে জালিমশাহী যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, তার পতন অনিবার্য। কারবালার হত্যাযজ্ঞে যারা অংশ নিয়াছিলো, দু বছরের মধ্যেই তারা ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর দেখা দেয় ইসলামী পুনর্জাগরণ।

পবিত্র আশুরার প্রধান আমল হলো রোজা। রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এ রোজা রাখা ছিলো ফরজ। আমরা নফল রোজা হিসেবে রাখলেও এর ফজিলত অত্যধিক। এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেন, ‘রমজানের পর যদি তোমরা রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রোজা রাখো। কারণ, এটা আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা একটি সম্প্রদায়ের তাওবা কবুল করেছেন। সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তওবাও তিনি কবুল করবেন।’(তিরমিজি, হাদিস নং-৭৪১) বলাবাহুল্য, এখানে এ দিন বলতে বোঝানো হয়েছে পবিত্র আশুরাকে।  অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখবে, আল্লাহ তার এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আহমাদ) এর রোজা দুটি। ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম।

আল্লাহতায়ালা আমাদের গুনাহ খাতা মাফ করুন এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার তৌফিক দিন। আমরা নবী করিম (স.) ও তার আহলে বায়েতের প্রতি জানাই দরুদ ও সালাম-আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ…।