হাতি দুটিকে বিদ্যুত দিয়ে হত্যা করে নৃশংসভাবে দাঁত, কান, শুঁড়, লেজ, চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যক্ষ কেটে নিয়ে যেখানে মাটি চাপা দেয়া হয়, সেখানে ৬০/৭০টি হাতির একটি দল শুধু অবস্থানই নেয়নি, করুণভাবে ডাকাডাকির পাশাপাশি তারা নানাভাবে প্রতিবাদ করেছে। এখনও এলাকায় তথা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বর্তমানে ডাংধরার দক্ষিণ মাখনেরচর সীমান্ত এলাকার মানুষ চরম হাতি আতঙ্গে ভুগছে। কারণ সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ওই এলাকায় হাতির দলটি অবস্থান করছিলো।
হাতি হত্যার ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ অক্টোবর। জামালপুর দেওয়ানগঞ্জের মাখনেরচর গ্রামে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে দুটি হাতি হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাদের দাঁত, কান, শুঁড়, লেজ ও চোখসহ মূল্যবান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ৬০-৭০টি হাতির একটি দল সেখানে অবস্থান নিয়ে জনবসতি এলাকার ঘর বাড়ির দিকে মুখ করে উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করে। ক্ষেতের আশেপাশের কাঠের গুঁড়ি তুলে লোকালয়ের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকে। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতি প্রকৃতিগতভাবেই দলবদ্ধ প্রাণী। পাঁচ হতে বিশটি পর্যন্ত হাতি একত্রে বাস করে। ওদের দলপতি হয় সবচেয়ে শক্তিশালী দাঁতাল। তারা বিপদাপদে একজোট। কখনো কখনো তারা গড়ে তোলে বৃহত জোট। হাতি সব বিচারেই শান্ত-শিষ্ট ও নিরীহ প্রাণী। সাধারণত আঘাত না করলে তারা কাউকে আক্রমণ করে না। কিন্তু কোনো কারণে খেপে গেলে তারা ধারণ করে ভয়ঙ্কর মূর্তি। আক্রমণ করার সময় পিছপা হয় না, রাখে জীবনবাজি। অন্যদিকে মানুষের মতো হাতিও অনেকটা সংবেদনশীল। তারা দুর্দিনে একে অপরকে সাহায্য করে। জামালপুরের ঘটনা হাতিদের বৈশিষ্ট্যেরই বহির্প্রকাশ।
হাতির একদিকে শান্ত স্বভাব, অন্যদিকে প্রতিবাদী মূর্তি। বস্তুত, সহমর্মিতা ও প্রতিরোধ স্পৃহা কম-বেশি জগতের অধিকাংশ প্রাণীর মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। হাতি তার ব্যতিক্রম নয়। আঘাত এলে বা অন্যায়ের শিকার হলে কেউই নির্বিকার থাকে না। কোনো না কোনো প্রকারে প্রতিবাদ করেই। হাতি হত্যার প্রতিবাদে হাতি যে অবস্থান নিয়েছে তা দেখে শিক্ষা নেয়ার বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনই ধরিত্রীর বুকে প্রাণীকূলকে বাঁচতে হলে, থাকতে হলে বণ্যপ্রাণীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি।