সাড়ম্বরে শুরু শারদীয় উৎসব : পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী : কোনো ধর্ম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: গতকাল মঙ্গলবার মহাসপ্তমীবিহিত থেকেই মূলত সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজা। আর মাত্র দুটি দিবানিশির প্রহর পেরুলেই উমার কৈলাশ গমন। ‘ঠাকুর থাকবে কতোক্ষণ’-এ সুর এখন ভক্ত প্রাণে। আজ বুধবার শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী। বিভিন্ন মণ্ডপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এক বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে সনাতনধর্মীরা তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করবেন। কুমারী পূজা কেন করে? শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা আছে- ‘সব স্ত্রী লোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ।’

দুর্গোত্সবের দ্বিতীয় দিন গতকাল ছিলো মহাসপ্তমী। এদিন ত্রি-নয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে দেবীর মহাসপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজাশেষে যথারীতি অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতির আয়োজন ছিলো। বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিতরা জানিয়েছেন, দুর্গাকে বিশেষ রীতি অনুসারে স্নান করানো হয়। দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে তাকে স্নান করানোর পর বস্ত্র ও নানা উপচারে মায়ের পূজা হয়। শারদীয় উৎসবকে পূর্ণতা দিতে যেমন বাড়তি নিরাপত্তা বলায় গড়ে তোলা হয়েছে, তেমনই সরকারি-বেসরকারিভাবে গতকালও চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নতুন বস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কোনো সংঘর্ষ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চান না। বরং সরকার চায় সকল ধর্মের মানুষ তার নিজ বিশ্বাস ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে। তিনি বলেন, কোনো ধর্মই সংঘর্ষ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। কিছু লোকের মধ্যে খারাপ মনোভাব রয়েছে। ফলে আমরা চাই জনগণ মুক্ত চিন্তার হবে। তারা একে অন্যকে সম্মান দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ বিশ্বাসই সকলের জন্য সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এবং ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এবং পরে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ এবং সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জেএল ভৌমিক। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পক্ষ থেকে পৌর এলাকার পূজামণ্ডপগুলোতে নগদ আর্থিক সহযোগিতা ও বস্ত্র বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিনেও চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন প্রতিটি পূজামণ্ডপে নগদ ১০ হাজার টাকা ও দরিদ্র হিন্দু ধর্মলম্বী পরিবারের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি নগদ অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ করেন চুয়াডাঙ্গা তালতলার ষষ্ঠীতলা সার্বজনীন পূজামণ্ডপে, তালতলা সার্বজনীন পূজামণ্ডপে ও দাসপাড়া সত্য সনাতন দুর্গাপূজামণ্ডপে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ২ গোলাম মোস্তফা মাস্তার, হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ললিত কুমার দাস, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সামাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ ও জীবন কৃষ্ণ বিশু প্রমুখ।

এদিকে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার পূজা মন্দিরসহ সরোজগঞ্জের বিভিন্ন পূজামন্দির ঘুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় উৎসব সার্বজনীন দুর্গা পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন এবং স্বার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক। উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি জাবিদুল ইসলাম জাবিদ, জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, কলেজ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্য খালিদ মাহামুদ, থানা ছাত্রলীগ নেতা রেদওয়ান আহাম্মেদ রানা, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা প্রমুখ।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দামুড়হুদা উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সাড়ে বেলা ১২টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ সম্মেলনকক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলার ২০টি পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিদের হাতে এক হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামিম হাসান, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছালমা জাহান পারুল, বাংলাদেশ হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্রী জগবন্ধু ধর, নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক, দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক আসলাম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মহাসিন আলী, নিশান তরফদার, শওকত আলীসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক আসলাম উদ্দিন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের পক্ষে বিভিন্ন মন্দিরে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেছেন তার সহোদর আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দর্শনা হরিজন সম্প্রদায়, রামনগর আদিবাসী ও দাসপাড়া পূজা মন্দিরে বস্ত্র বিতরণ করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আ.লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, গোলাম ফারুক আরিফ, মোমিনুল ইসলাম, শফিকুল আলম, আ. রফিক কাবি, যুবলীগ নেতা শেখ আসলাম আলী তোতা প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু মুসা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গার পৌরসভাধীন ১১টি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে আড়াই হাজার করে টাকা অনুদান দেন। পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ড সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ৪নং ওয়ার্ড সভাপতি সরোন, ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ৩নং ওয়ার্ড সম্পাদক স্বপন, ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি পিয়ার মোহাম্মদ কচি প্রমুখ।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুনউজ্জামান ফুলবাড়ি সারদীয় দুর্গা পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন আরতির সময় যেহেতু ভিড় হয়, সেহেতু এ সময় নারী-পুরুষদের আলাদাভাবে বসানোর জন্য পূজা কমিটিসহ সংশ্লিষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মীদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ সময় তার সাথে ছিলেন শঙ্করচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রহমান ও ইউপি সদস্য ছাদেক আলী।

পূজামণ্ডপগুলোতে উৎসবের আমেজ বইছে। সন্ধ্যায় থাকছে ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান আমঝুপি হালদারপাড়া রাধা মাধব মন্দির, পূজা কমিটির সভাপতি তপন কুমার সাহা ও সম্পাদক মঙ্গল কুমার বিশ্বাস জানান ইতোমধ্যে পূজা উৎসব ও মন্দিরের সংস্কার বাবদ সরকারি অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে।

 

 

 

 

Leave a comment