জন্মদিনে বিদায়ের ঘোষণা শেবাগের

মাথাভাঙ্গা মনিটর: নিজের ৩৭তম জন্মদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও আইপিএলকে বিদায় বলে দিলেন বীরেন্দর শেবাগ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে টুইটারে নিজের অবসরের ঘোষণা জানিয়ে দেন ভারতের এ মারমুখি ব্যাটসম্যান। অবসরের ইঙ্গিতটা আগের দিনই দিয়ে রেখেছিলেন বীরেন্দর শেবাগ। একটি ওয়েবসাইটের ভিডিও সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, মাস্টার্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে যাচ্ছেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক এ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলতে হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়া ক্রিকেটার হতে হয়। শেবাগ বলেছিলেন, শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের ঘোষণা দেবেন।

সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসে গেলো ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই। এক বিবৃতিতে শেবাগ জানান, অবসরের এই ক্ষণ ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি বেশ আগেই। সৃষ্টিকর্তা আমার প্রতি খুবই দয়ালু। ক্রিকেট মাঠে এবং আমার জীবনেও, আমি যা করতে চেয়েছি, করতে পেরেছি। বেশ কিছু দিন আগেই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, ৩৭তম জন্মদিনে আমি অবসর নেবো। এ অবসর অবশ্য কেবল আনুষ্ঠানিকতাই। শেবাগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে গেছে বেশ আগেই। ভারতের হয়ে সবশেষ খেলেছেন তিনি ২০১৩ সালের মার্চে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মোহালিতে ওয়ানডে অভিষেক শেবাগের। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ব্লুমফন্টেইনে। ভারতের হয়ে জিতেছেন তিনি ২০১১ বিশ্বকাপ ও ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৯ সালে ডিসেম্বরে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতে টেস্ট ৱ্যাঙ্কিঙের শীর্ষে ওঠা ভারতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন। এক যুগের বেশি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে তৃপ্তিই পাচ্ছেন বিস্ফোরক এক ব্যাটসম্যান।

ক্রিকেট আমার জীবন, জীবন হয়েই থাকবে। ভারতের হয়ে খেলাটা ছিলো স্মরণীয় এক ভ্রমণ। সতীর্থ ও ভারতীয় ক্রিকেটের ভক্তদের জন্য আমি এটি আরও স্মরণীয় করার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, সেই চেষ্টায় আমি যথেষ্ট সফলও হয়েছি।

বিশ্ব ক্রিকেটে প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন তিনি ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৬৯ বলে শতক করে। রঙিন পোশাকে নিয়মিত ওপেনার হওয়ার পর ওয়ানডেতে আলাদা জায়গা করে নেন দ্রুতই। তবে শেবাগ আসল চমকটা দেখিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে। ব্যাটিং ব্যাকরণের অনুসারী না হয়েও বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে। অভিষেক টেস্টে শতরান দিয়ে শুরু করেছিলেন। ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন ২০০৪ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতানে। ছক্কা মেরে ট্রিপল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার প্রথম কীর্তিও গড়েছিলেন সেদিন। ২৯৫ থেকে সাকলায়েন মুশতাককে ছক্কায় স্পর্শ করেছিলেন তিনশ।

২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চেন্নাইয়ে আরও একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি উপহার দেন শেবাগ। ২৭৯ বলের ছুঁয়েছিলেন তিনশ, টেস্ট ইতিহাসে তিনশ বলের কম খেলে ট্রিপল সেঞ্চুরির একমাত্র নজীর সেটি। এছাড়াও টেস্টে দ্রুততম তিনটি দ্বিশতকের দুটিই শেবাগের। মোট ৯১টি ছক্কা মেরেছেন, টেস্ট ইতিহাসে যা পঞ্চম সর্বোচ্চ।

ক্যারিয়ারের দুঃসময়েও ব্যাটিঙের আক্রমণাত্মক ধরনের সাথে আপস করেননি। সেটির প্রমাণ তার স্ট্রাইক রেটেও। টেস্টে স্ট্রাইকরেট ৮২.২৩, ওয়ানডেতে ১০৪.৩৩। টেস্ট ওপেনারদের সংজ্ঞা পাল্টে দেয়া একজন হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন শেবাগ ক্রিকেট ইতিহাসে।