ক্ষতিকারক এনার্জি ড্রিংকস দ্রুত নিষিদ্ধ করা জরুরী

১৮টি কোম্পানীর এনার্জি ড্রিংকসে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান পাওয়া গেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানীর পানীয়তে ভায়াগ্রার উপাদান সিলডেনাফিল সাইট্রেটের অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়াও আরো ১২টি প্রতিষ্ঠানের পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ৪টিতে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল। চমকে ওঠার মতোই খবর। শুধু তাই নয়, দেশে বাজারজাত করতে বৈধভাবে কোন প্রতিষ্ঠানকে এনার্জি ড্রিংকস তৈরির নিবন্ধন দেয়নি কোন সরকারী সংস্থা। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,এনার্জি ড্রিংকস লেখা যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে তা অবৈধ।

কার্বোনেটেড বেভারেজ হিসেবে যা বাজারজাত করছে বিভিন্ন কোম্পানী তা এনার্জি ড্রিংকস হিসেবে পরিচিত। ওই কার্বোনেটেড বেভারেজে নির্ধারিত মাত্রার অনেক বেশি ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন,দেশে এনার্জি ড্রিংকসের নামে যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে তাতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। যেসব পানীয়তে এলকহল তথা নেশাজাত দ্রব্যসহ অন্যান্য উপাদান পাওয়া গেছে,সেগুলো নিষিদ্ধ করা হবে। বিশেজ্ঞদের অভিমত,দিনের পর দিন সিলডেনাফিল,অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল মিশ্রিত তথাকথিত এনার্জি ড্রিংকস পান করার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি,গর্ভপাত,অস্বাভাবিক আচরণসহ মানবদেহে ও মনে নানা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- দীর্ঘদিন এসব ক্ষতিকারক এনার্জি ড্রিংকস বাজারে রয়েছে কিভাবে?

এনার্জি ড্রিংকসের নামে প্রকারান্তরে মাদক বা নেশা জাতীয় পণ্য বিক্রির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এনিয়ে অতীতেও বহুবার লেখালেখি হয়েছে। দেখা যায়,পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে কিছুদিন কোন কোন কোম্পানী এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন বন্ধ রাখে। এরপর ভিন্ন নামে একই ধরনের পণ্য বাজারজাত শুরু করে। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, কর্মজীবী-শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেও এর প্রসার ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এইচএম আনোয়ার পাশা। তিনি জানিয়েছেন, কিছু এনার্জি ড্রিংকসের মধ্যে এর আগেও ফেনসিডিলের উপাদান পাওয়া গেছে। তাঁর মতে,কুটির শিল্পের মতো এনার্জি ড্রিংকস তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতকিছুর পরও কিভাবে কেমন করে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এধরনের ড্রিংকসগুলো বাজারে রয়েছে বা থাকতে পারার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে? বিএসটিআই মহাপরিচালক বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি প্রতিষ্ঠানকেও এনার্জি ড্রিংকস তৈরির লাইসেন্স দেয়নি। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদকরা বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব ড্রিংকস বিক্রি করছে কিভাবে?

‌      ক্ষতিকারক এনার্জি ড্রিংকস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এনার্জি ড্রিংকস বাজারে ছাড়ার অনুমতি দিতে হলে সরকারের কোন মনোনীত সংস্থাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয়া দরকার। সিলডেনাফিল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদিত ওষুধ। এর অপব্যবহার রোধে ওই প্রতিষ্ঠানকে জরুরী নির্দেশ প্রদান করতে হবে। মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে,আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের সাথে এসব ড্রিংকস প্রস্তুতকারীদের কোন না কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ,এ ধরনের ড্রিংকস মাদকে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন,এটাই প্রত্যাশিত।