সিলেট রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুল কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের বহুল আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল হকের আদালতে হাজির করার পর বিচারক এ নির্দেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা থেকে কামরুলকে নিয়ে যাওয়া পুলিশের গাড়ি সিলেটে পৌঁছায়। তাকে কোতয়ালি থানায় নেয়া হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে কামরুলকে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা দেশে ফেরেন। কামরুলকে দেশে আনা উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিলো। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষে তাকে নিচতলার গেট দিয়ে বের করে আনা হয় সাংবাদিকদের সামনে। এ সময় কামরুলের দু হাতে হ্যান্ডকাফ ও মাথায় হেলমেট। তার পরনে ছিলো ক্রিম কালার প্যান্ট ও চেক স্ট্রাইপ শার্ট। তার ওপর পুলিশ লেখা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। এর ওপর সাদা তোয়ালে দিয়ে তার শরীর ঢাকা ছিলো। এ সময় কামরুলের বিধ্বস্ত চেহারা ও মুখভর্তি দাড়ি দেখা গেছে। তাকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। বিমানবন্দরে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো সিলেটের উদ্দেশে ছাড়ার জন্য প্রিজনভ্যান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওই ভ্যানে তাকে তুলে সিলেটে রওনা দেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দু প্রতিনিধি। বিমানবন্দরে কামরুলকে দেখার জন্য উৎসুক মানুষের ভিড়ও দেখা গেছে।
কামরুলকে নিয়ে পুলিশের প্রতিনিধি দলটি বিমানবন্দর নামার পর বিকাল ৪টায় সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকার পরও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত আনা বাংলাদেশ পুলিশের বড় সাফল্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে কামরুলকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। এজন্য পুলিশ সদর দফতর আগেই আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিয়েছে। নজরুল ইসলাম বলেন, ৮ জুলাই সিলেটে শিশু রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাজন হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে আগেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর আরও দু আসামি পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারের বিষয়েও পুলিশের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। কামরুলকে সিলেটে আদালতে তোলা হবে। আদালত তার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। ব্রিফিংয়ের সময় পুলিশ সদর দফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আহসানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, পালিয়ে যাওয়ার পর ১২ অক্টোবর কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুবুল করিম, এসএমপির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার এএফএফ নেজাম উদ্দিন সৌদি আরব যান। এর আগে ২১ জুলাই কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।
ঘাতকের ফাঁসি দাবি: রাজনের পিতা আলম ও মা লুবনা। দু’জনেরই দাবি ঘাতক কামরুলের ফাঁসি। শুধু তারা নয়, পৈশাচিক নির্যাতনে রাজন খুনের ঘটনা যারাই শুনেছেন তাদেরও একই দাবি। তারা বলেন, রাজনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। বলাৎকারে রাজি না হওয়ায় তাকে খুন করা হয়। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে তা উঠে এসেছে। তারা নিরপরাধ শিশু রাজনকে খুন করে চুরির অপবাদ দিয়েছিলো। খুনের পর লাশ গুমের চেষ্টা করেছিলো ঘাতক কামরুলের ভাইয়েরা। আমাদের ছেলে রাজনকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। কামরুলসহ খুনিদের ফাঁসি চাই। নৃশংসভাবে রাজনকে খুনের প্রতিদান যেন হয় তাদের ফাঁসি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঘাতক কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর রাজনের পিতা শেখ আজিজুল ইসলাম আলম ও রাজনের মা লুবনা আক্তার এ দাবি জানান কাছে। তবে মোবাইল ফোনে আলাপকালে রাজনের পিতা ও মাতা প্রধান ঘাতক কামরুলকে নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। রাজনের পিতা শেখ আলম বলেন, রাজন খুনের পর থেকেই ঘাতক কামরুলকে রক্ষায় ব্যস্ত ছিলো পুলিশের একাংশ। রাজনের পিতা আরও জানান, বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকায় ছিলেন। তার দাবি, আমেরিকা ও নরওয়ে দূতাবাস ঢাকায় ডেকে নিয়েছিলো তাকে। রাজন খুনের ঘটনায় সহমর্মিতা প্রকাশ করে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা।
৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ: রাজন হত্যা মামলায় ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ৬ পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যদাতারা হচ্ছেন, সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন, রাজন হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা একই থানার বরখাস্তকৃত ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, একই থানার এসআই আরিফুল আমিন, এসআই শামীম আকঞ্জি, এএসআই সোহেল রানা ও সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহাদেব বাঁছাড়। রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শওকত চৌধুরী জানান, রাজন হত্যা মামলায় মোট ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদারের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
৮ জুলাই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানা এলাকার কুমারগাঁওয়ে খুঁটিতে বেঁধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে খুন করা হয় শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে।

Leave a comment