খুনের মতো জঘন্য অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। ভাইয়ের হাতে ভাই, সন্তানের হাতে মা খুন হওয়ার মতো পাশবিক হত্যাকাণ্ড আমাদের দেখতে হচ্ছে। নিজ ঘর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনাও আজ নিরাপদ নয়। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় স্কুলছাত্রী খুন হওয়ার ঘটনাটি মর্মান্তিক। জানা গেছে, উপজেলার বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা মণি দাস স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য বিদ্যালয় ফটকের সামনে পৌঁছার পর প্রেম প্রত্যাখ্যাত এক তরুণ তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। সম্প্রতি দেশে স্কুলছাত্রী নিগ্রহ, ধর্ষণ ও হত্যাসহ অপরাধের প্রকোপ বেড়ে গেছে। এটি উদ্বেগজনক।
দেশে প্রায় প্রতিদিনই খুনসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে। এটিও একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। খুন-গুম, আত্মহত্যা ইত্যাদির ব্যাপকতা কোনো সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। এটি মূল্যবোধের অবক্ষয়ের নিদর্শন। এ ব্যাপারে এখনই আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ কমাতে হলে প্রথমে এর কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তা না হলে সমাজে অপরাধের মাত্রা কমবে না। অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে বিভিন্ন অপরাধ, বিশেষ করে নৃশংস ও বীভৎস হত্যাকাণ্ডসহ সামাজিক অপরাধ কমে আসবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে জবাবদিহিতাও প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার অন্যতম শর্ত হলো জবাবদিহিতা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে রাষ্ট্রে সেই প্রক্রিয়ার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয় আমলে নিয়ে দ্রুত এর সমাধান খোঁজা উচিত। এ ব্যাপারে অবহেলা দেখালে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
মৃত্যু অবধারিত ও অমোঘ হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে কারও মৃত্যুর ঘটনা মানুষকে ব্যথিত করলেও তা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকে না। কিন্তু মৃত্যু যদি অস্বাভাবিকতা নিয়ে মানুষের জীবনে হানা দেয়, তাহলে স্বজন, পরিবার-পরিজনের মর্মযাতনার সীমা থাকে না। দেশে অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বর্তমানে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সমাজ সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে না চললে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বিচার বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অপরাধীর মনে ভীতির জন্ম দেয়। এক্ষেত্রে শাস্তি নিবৃত্তমূলক ভূমিকা পালন করে। যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর যতো দ্রুত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা যায় ততোই মঙ্গল। প্রত্যেক নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। হত্যা ও অন্যান্য অপরাধ দমনে এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।