দলীয় প্রতীকে ইউপি পৌরসহ সকল ভোট : স্থানীয় সরকারের সব স্তরে প্রশাসক নিয়োগের বিধান

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকারের সকল স্তরের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন) নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নে প্রার্থিতা নির্ধারণের বিধান রেখে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের সংশোধনী প্রস্তাব গতকাল সোমবার অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। একই সাথে দৈবদুর্বিপাক ও অন্য কোনো কারণে এসব স্তরে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সরকার পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে মর্মে বিধান করা হয়েছে। এতোদিন বিধানটি কেবল সিটি করপোরেশন এবং নতুন পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিলো। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল এসব নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারবে। পাশাপাশি নির্দলীয়ভাবেও প্রার্থী হওয়া যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সচিবগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ), (উপজেলা পরিষদ), (পৌরসভা), (জেলা পরিষদ), (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধনের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ও সাহসী পদক্ষেপ। এর ফলে তৃণমূলে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়বে। সকল দলের সমান সুযোগ তৈরি হবে। সকলের অংশগ্রহণে উত্সবমুখর নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য যে দলের যে প্রতীকে নির্বাচন করবেন একই দলের এমপিকেও একই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এজন্য দলীয় গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আসবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জানান, জাতীয় নির্বাচনে যেভাবে মনোনয়ন বোর্ড থাকে সে আদলে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও মহানগর পর্যায়ে মনোনয়ন বোর্ড থাকবে। এমপিরা সম্ভবত এর সমন্বয়কারী থাকবেন। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। এটা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকায় ‘স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ ভেটিঙের পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।

ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ আইন, জেলা পরিষদ আইন এবং স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন ২০১৫ ভেটিঙের পর পাসের জন্য সংসদে যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, এ পাঁচটি আইনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পরিচালিত হয়। এ সংশোধন ছোট হলেও রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এর প্রভাব অনেক বেশি।

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করার নিয়ম চলে এলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ২০০৮ সালে চার সিটি করপোরেশনে নির্বাচন একসাথে করার অভিজ্ঞতার পর তখনকার নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেবল আইনের পাতাতেই আছে। প্রকারান্তরে দলীয় নির্বাচনই তো হচ্ছে। দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে যেকোনো সমস্যার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো দায়ী থাকে। কাজেও অনেক সুবিধা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত গণতন্ত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় মনোনয়নে হয়। যেমন ব্রিটেন-ভারতেও স্থানীয় নির্বাচন দলীয় মনোনয়নে হয়। সিটি করপোরেশন বাদে অন্যান্য আইনে যে বিধান রয়েছে তাতে পাঁচ বছর মেয়াদের পর কোনো কারণে নির্বাচন না হলে আগে যারা ছিলেন তারাই দায়িত্ব চালিয়ে যেতেন। আইন সংশোধনের পর তা আর সম্ভব হবে না। মেয়াদ শেষ হলে সরকার যথাসময়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। যদি কোনো জটিলতায় নির্বাচন না করতে পারে, অন্তর্বতী সময়ের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। আগে এটা কেবল সিটি করপোরেশন আইনে ছিলো। এখন এ বিধান প্রতিটি আইনে যুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসকরা নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে সরকার চাইলে তাদের পরিবর্তন করে দিতে পারবে।

জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ সমর্থক ভোটারের তালিকা দিতে হবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অধ্যাদেশ বা সংসদে আইন পাস হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বিধিমালা সংশোধনের সময় বিষয়টি ঠিক করবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীরা স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য আলাদা প্রতীক থাকবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক জানান, দলীয় প্রতীকে তৃণমূলের নির্বাচনী ব্যবস্থার ফলে সকল রাজনৈতিক কর্মীর দলের প্রতি আনুগত্য বজায় থাকবে। শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। তৃণমূলের গণতন্ত্র আরও সুদৃঢ় হবে। এটি একটি যুগান্তকারী সংস্কার বলে মন্তব্য করেন তিনি। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে জেলার অধিক্ষেত্রে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ও সংরক্ষিত প্রতিনিধিদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানিয়েছেন, আইন পাস হলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, জেলা পরিষদের প্রশাসক পদেও দলীয়ভাবে নির্বাচন করা হবে।

ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন: ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সারা দেশে পৌরসভা রয়েছে ৩২৪টি। এর মধ্যে নির্বাচন উপযোগী রয়েছে ২৮৫টি। তবে সীমানা জটিলতার কারণে আপাতত ২৬টিতে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। বাকি পৌরসভাগুলোয় সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। আর কয়েকটিতে সম্প্রতি নির্বাচন হয়েছে।

ইউপি নির্বাচন: সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২০১১ সালের মার্চে যেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, সেগুলো এ বছরের অক্টোবরের পর নির্বাচন উপযোগী হবে। আর বাকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচন ২০১৬ সালের জানুয়ারি  থেকে।

Leave a comment