ভৈরব পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে ফিরে আসছে সোনালি স্বপ্ন

মাজেদুল হক মানিক/শেখ শফি: মেহেরপুরে ভৈরব নদ পুনর্খননের কাজ চলছে পুরোদমে। ভৈরবের বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ দ্বার গাংনী উপজেলার কাথুলী থেকে মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর পর্যন্ত এ খনন কাজ করা হবে। এক সময়ের প্রমত্তা ভৈরব নদ ভরাট হয়ে পানি শূন্য হয়ে পড়ায় দু পাড়ের বাসিন্দাদের দিনগুলোই হয়ে পড়েছিলো বিবর্ণ, তাদের সামনে যেন ফিরে আসছে সোনালি স্বপ্ন।

চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭০ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ২১৬ টাকা ব্যয়ে ২৯ কিলোমিটার খননকাজ করা হবে। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারিত রয়েছে। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকার্স লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ পুনর্খননের কাজ বাস্তবায়ন করছে। কাজের শুরুতেই শতাধিক আধুনিক খননযন্ত্র দিয়ে মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর স্লুইট গেট থেকে পুনর্খনন শুরু হয়। প্রায় ২৫ ভাগ খননের পর বর্ষা শুরু হওয়ায় বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। পানি শুকিয়ে গেলে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবারো খনন কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পুনর্খননের মধ্য দিয়ে ভৈরব নদ ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব। নদের বিভিন্ন স্থান মরাগাঙে পরিণত হয়েছিলো। খনন করে নদের প্রস্থ হচ্ছে ৫০ মিটার। গভীরতা গ্রাউন্ড লেবেলে আড়াই থেকে পাঁচ মিটার। ওপরে স্লোকসহ ৬৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে নদে সারা বছর পানি থাকার আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া নদীর দু পাড়ে বৃক্ষরোপণ ও বাজার সৃষ্টিসহ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। অপরদিকে সেচ সুবিধা পাওয়ায় এ অঞ্চলের ভুগর্ভস্থ পানির ওপরও চাপ কমে আসবে। পুনর্খনন কাজের অগ্রগতি ও গুনগত মান পর্যবেক্ষণের জন্য নৌবাহিনীর একটি দল এলাকায় অবস্থান করছে। অফিসার, প্রকৌশলী, জেসিও এবং নাবিক রয়েছেন এ দলে। এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নৌ বাহিনীর তত্বাবধানে খনন কাজ হওয়ায় নিবিঘ্নে কাজ চলছে। যা বেসামরিক কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব ছিলো না। নদের দু পাড়ে দখলদারদের বেশিরভাগ তাদের স্থাপনা ও গাছগাছালি সরিয়ে নিচ্ছেন। খনন কাজে সব রকম সহযোগিতা করছে তারা। রসিকপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, নদ খণ্ড খণ্ড করে দখল করেছে প্রভাবশালীরা। সেখানে তারা মাছ ও ধান চাষ করে থাকেন। এতে সাধারণ কৃষক ও জেলেদের নদে প্রবেশের কোনো উপায় ছিলো না। খননের মধ্য দিয়ে এখন মুক্ত নদের সেচ সুবিধা এবং মাছ ধরতে পারছেন স্থানীয়রা। ফলে ক্রমেই অভিশাপ বয়ে আনা ভৈরব নদ এখন আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে খনন কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর্যন্ত দেখভালের জন্য নৌবাহিনীর ওপর দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও মেহেরপুর জেলাসহ চুয়াডাঙ্গা ও যশোর অঞ্চলে মালামাল বহনের একমাত্র উপযোগী ছিলো ভৈরব নদের পথ। এমন অবস্থায় জেলার মানুষের প্রধান দাবির মধ্যে অন্যতম একটি দাবি হয়ে ওঠে ভৈরব নদ পুনর্খনন। এতে সাড়া দেয় সরকার। ২০১০ সালে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের মুজিবনগর আম্রকাননের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভৈরব নদ পুনর্খনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় পুনর্খনন কাজ শুরু হয়।

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল বলেন, ভৈরব নদ পুনর্খনন কাজ জেলাবাসীর বিরাট পাওয়া। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের চাওয়া পূরণ হতে যাওয়ায় সব মহলের মানুষ খুশি। জেলার অন্যান্য নদ-নদীগুলো পুনর্খননের জন্য চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।