সাংবাদিকদের ওপর চোরাচালানীদের নগ্ন নৃশংস হামলা

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় চোরাচালানচক্র কতোটা ভয়ানক হয়ে উঠেছে তা তাদের হিংস্রতা দেখে স্থানীয় আমজনতার বুঝতে কষ্ট হয়নি। চোরাচালানের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করতে গিয়ে তাদের নগ্ন হামলায় রক্তাক্ত জখম হয়ে কোনো রকম প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফেরা দু সাংবাদিক শুধু হতভম্বই হননি, সাংবাদিকতা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে তাও হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছেন। সমাজ? অবশ্যই গণমাধ্যম সমাজের আয়না। সমাজ যদি সে আয়না স্বচ্ছ রাখতে অক্ষম হয়, তা হলে সেই আয়নার প্রতিচ্ছবিতে অস্পষ্টতা বাড়বে ক্রমশ। ভালো ভবিষ্যতের জন্য অবশ্যই আয়নার স্বচ্ছতা অক্ষুণ্ণ রাখার দায় সমাজেরই। যেহেতু সব আয়না নিজেই স্বচ্ছ হয় না, পারদ থাকে প্রভাবিত, সেহেতু সচেতন সমাজকে সেদিকেও বিশেষ নজর দিয়ে করণীয় নির্ধারণ প্রয়োজন। যদিও প্রভাবিত পারদ পাঠকের কাছে কখনোই পাত্তা প্রশ্রয় পায়নি, পায় না।

‌      চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ভারত সীমান্তবর্তী ভারী শিল্পনগরী। চোরাচালানীদের দাপট নতুন নয়। সীমান্ত প্রহরীদের চোরাচালান রোধে আন্তরিকতার বাড়তি বা ঘাটতির সাথে সাথে ওদের দাপটও বাড়ে-কমে। অবশ্যই চোরাচালান রেখে কোনো দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করা যায় না। সে কারণেই চোরাচালান বন্ধে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ৬ বিজিবি চুয়াডাঙ্গা এলাকায় দায়িত্ব নেয়ার পর দফায় দফায় পতাকা বৈঠক, সীমান্তে চোরাচালানবিরোধী গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। এসবে কি কোনোই প্রভাব পড়ছে না? দর্শনায় চোরাচালানীরা অতো ভয়ানক হয় কোন সাহসে, কার ইশারায় চোরাচালান বেড়েছে?

‘দর্শনায় চোরাচালান বেড়েছে। প্রকাশ্যেই চোরাচালান হচ্ছে।’ স্থানীয়দের এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত পরশু বুধবার দুপুরে বেসরকারি টেলিভিশন দেশ’র চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি খাইরুজ্জামান সেতু ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার স্টাফ রিপোর্টার জহির রায়হান সচিত্র প্রতিবেদনের জন্য সরেজমিন পরির্শন করেন। চোরাচালানের যে রমরমা, সে ছবি ক্যামরায় ধরাও পড়ে। সীমান্ত থেকে চোরাচালানী মালামাল কীভাবে অটোযোগে পাচার করে বাসস্ট্যান্ডে নেয়া হচ্ছে, সেই ছবি ধারণের এক পর্যায়ে জনগণের সামনে দুজন সংবাদিকসহ তিনজনের ওপর চোরাচালানীরা যেভাবে হামলা চালায়, তা আসলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। অবশ্য পুলিশ হামলাকারীদের একজনকে গ্রেফতার করেছে।

চোরাচালান বন্ধে সীমান্তরক্ষীদের আরো আন্তরিক হতে হবে। সকল প্রকারের অপ্রতুলতা কাটিয়ে তুলে চোরাচালান শূন্যের কোটায় নিতে না পারলে দেশের স্বনির্ভরতা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াবে। আর মাদক? মাদকচোরাচালানীর কারণে দেশের ভবিষ্যত যে পতনেরও তলানিতে গিয়ে ঠেকতে যাচ্ছে নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। চোরাচালান, মাদক ও সন্ত্রাস একই সুতোয় বাধা। এসব রোধে দায়িত্বশীলদের কোনো অজুহাতই মানায় না। সাংবাদিকদের হাতে থাকে ক্যামেরা-কলম। সমাজের চিত্র তুলে ধরতে তথা সমাজের সামাজিক গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয় এদের। যেহেতু সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সঠিক চিত্র তুলে আনতে হয়, সেহেতু সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি একটু বেশি গুরুত্বের মধ্যেই পড়ে। যদিও দেশের প্রচলিত পদ্ধতি বিধি বিধানে সাংবাদিকদের বাড়তি সুযোগের অভাব। এরপরও দু সংবাদিকের ওপর চোরাচালানীদের নগ্ন নৃশংস হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবি তো উঠতেই পারে। উঠেছেও।