স্টাফ রিপোর্টার: বুদ্ধিদীপ্ত সবল সুস্থ সন্তান কে না চায়? এ জন্য সন্তান প্রসবের ঠিক কতোটুকু সময়ের মধ্যে শালদুধ খাওয়াতে হবে তা জানতে হবে প্রসূতিসহ পাশে থাকা সকলকে। শুধু তাই নয়, সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর প্রসূতিকে যেমন সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় খাবার, চিকিৎসাসহ মানসিক সহযোগিতা করা দরকার, তেমনই সন্তান প্রসবের পর ৬ মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। তবেই না মা-সন্তান উভয়ই সুস্থ থাকবে। নবজাতক বেড়ে উঠবে স্বাভাবিকভাবে।
চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে তিন দিনের কর্মশালার প্রথম দিনে প্রশিক্ষকমণ্ডলীর মুখে ঘুরেফিরেই উপরোক্ত তাগিদ উঠে আসে। কারণ হিসেবে বলা হয়- পিতা-মাতাসহ পরিবারের সক্কলে যেমন চায় সুস্থ সবল বুদ্ধিদীপ্ত নবজাতক, তেমনই সরকারও চায় আজ যে শিশু ভুমিষ্ঠ হচ্ছে, সেও বুদ্ধিসম্পন্ন সুস্থ সবল হোক। আজকের শিশুই জাতির আগামীদিনের স্বপ্ন পূরণ করবে। জাতির ভবিষ্যত তো এরাই। চুয়াডাঙ্গা সার্কিট হাউসের বাতানুকল বৈঠকখানায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক একেএম শামীম চৌধুরী উদ্বোধন ঘোষণার আগে বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। মাতৃমৃত্যু হ্রাসে সফল হয়েছি। জাতিসংঘ আমাদের ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা-নেতৃত্বে বহু ক্ষেত্রেই আমাদের সফলতা রয়েছে, প্রতিদিনই সমাজে ভালো কাজ হচ্ছে। অথচ গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরই বেশি উপস্থাপিত হচ্ছে। কেন? ইতিবাচক খবর দর্শক বা পাঠক আকৃষ্ট করার মতো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে না বলেই নেতিবাচকে আবদ্ধ আমাদের দৃষ্টি, রুচি। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকতা পেশায় বৈচিত্রতা আছে। মানুষের সাথে, জীবনের সাথে মেশা যায়। সমাজের উপকার করা যায়। অবশ্য যদি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আন্তরিক ও সচেতন হওয়া যায় তবেই না সেই সমাজ উপকৃত হয়। পেশায় আসাটাও সার্থক হয়।
শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্পের (চতুর্থ পর্যায়) গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান অতিথি একেএম শামীম চৌধুরী বলেন, সরকার গণমাধ্যম কর্মীদের চোখে দেখে অনেক ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেয়। গণমাধ্যমের ওই কর্মীর উপস্থাপিত সংবাদের তথ্য বস্তুনিষ্ঠতার বদলে যদি ভুল হয় কিংবা কোনোভাবে প্রভাবিত হয় তাহলে সরকারের সিদ্ধান্ত নির্ভুল হবে কীভাবে? সে কারণে বস্তুনিষ্ঠতায় যেমন আন্তরিক থাকতে হবে, তেমনই জাতির সুন্দর ভবিষ্যত গঠনে আজকের শিশু ও নারীদের প্রতি আমাদের আন্তরিক দায়িত্বশীল হতে হবে, এ দায়িত্ব পালন করতে হবে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠান প্রধান ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। বক্তব্য দিতে গিয়ে পৌর মেয়র যেমন তুলে ধরেন পৌর এলাকার কয়েকটি বস্তিতে কমিউনিটি শৌচাগার নির্মাণের বর্ণনা, তেমনই পুলিশ সুপার নারী শিক্ষার অন্তরায় ও শিশু বিয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পথে যৌন হয়রানি বা ইভটিজিঙ প্রসঙ্গ তুলে ধরে নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। সিভিল সার্জন জেলার স্বাস্থ্য বিষয়ক হালচিত্র সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। আর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান তথা সভাপতি সায়মা ইউনুস তিনদিনের প্রশিক্ষণশালার সফলতা কামনা করে বলেন, সমাজকে স্বনির্ভরতার পথে নিতে শিশু ও নারীদের অধিকার এবং তাদের প্রতি আমাদের করণীয় জানাতে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তিনি তিনদিনের কর্মশালার সফলতা কামনা করেন।
কর্মশালায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক আব্দুল জলিল, উপপরিচালক নজরুল ইকবাল, পরিচালক মাবুদ মনোয়ার ভূইয়া, দ্বীপ্ত টিভির জয়েন্ট অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর শাহনাজ শারমীন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. এহসানুল হক মাসুম প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আজ শুক্রবার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিন। আগামীকাল শনিবার সমাপনী।