এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউয়ের নম্বর কমলো : সৃজনশীল পরীক্ষার আগে এমসিকিউ

স্টাফ রিপোর্টার: ২০১৭ সাল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) ১০ নম্বর কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ১০ নম্বর সৃজনশীল অংশে যুক্ত হবে। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে এ দু পাবলিক পরীক্ষায় সৃজনশীল এর আগে এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর পর্যন্ত সৃজনশীল এর পরে এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে যেসব বিষয়ে ৪০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয় সেসব বিষয়ে ৩০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। আর যেসব বিষয়ে ৩৫ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়, সেসব বিষয়ে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিহার করাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের সময় বৃদ্ধি ও প্রাইভেট কোচিং নিরুত্সাহিত করার জন্য আরও উন্নত পরীক্ষা পদ্ধতি খুঁজে বের করার প্রয়োজন রয়েছে। সভায় পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও প্যাকেটজাতকরণের জন্য বিজি প্রেসকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামপ্রতিক সময়ে এসএসসির মতো বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে পরীক্ষা শুরুর আগেই এমসিকিউয়ের প্রশ্ন কোনো কোনো জায়গায় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার হল থেকে ওই প্রশ্ন কোনো না কোনো ভাবে বাইরে চলে আসছে। এটা বন্ধ করতেই এমসিকিউয়ের নম্বর কমানোর  সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এমসিকিউর নম্বর কমানোর নেপথ্যে: চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে বগুড়ার আমতলী বিদ্যালয় এবং ঢাকার শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী) প্রশ্ন বাইরে পাঠানোর সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিলো মন্ত্রণালয়ের কাছে। এছাড়া গত ২১ মে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে টঙ্গী শফিউদ্দিন সরকার অ্যাকাডেমি অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। রসায়ন পরীক্ষা চলাকালীন এমসিকিউ পরীক্ষা শুরুর দু ঘণ্টা আগেই প্রশ্ন ফাঁস করেন ওই শিক্ষক। বিষয়টি হাতে নাতে ধরে ফেলে শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক দল। এমসিকিউ নিয়ে এমন একাধিক অভিযোগ ছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। এ কারণে বিভিন্ন মহল থেকে এমসিকিউ বাতিলেরও সুপারিশ আসে। এর প্রেক্ষিতেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশে ১০ নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ১০ নম্বর সৃজনশীল অংশে যোগ করা হবে।

এ বিষয়ে গত ৩০ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৪০ নম্বর অসৎ উপায় অবলম্বন করে পাওয়া সহজ। এমসিকিউ স্বাভাবিক পরীক্ষা পদ্ধতিকে নষ্ট করছে। কিছু শিক্ষক পরীক্ষার আগেই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। যে কারণে নম্বর পাওয়া সহজ হয়ে গেছে। এমসিকিউ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অনেক তথ্য রয়েছে। কিছু জায়গায় হাতে নাতে ধরা হয়েছে। তাই আগামীতে এ পদ্ধতি রাখা হবে কি না, তা নিয়ে শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শিক্ষকরা বলছেন, পরীক্ষার দু-তিন ঘণ্টা আগেই শিক্ষকরা প্রশ্নের প্যাকেট খুলে এমসিকিউ সমাধান করে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিচ্ছেন। এতে সহজেই ৪০ নম্বর পেয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাই এমসিকিউতে নম্বর কমানোর সিদ্ধান্তকে  স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা আরো বলেছেন, এমসিকিউ ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয়েছিলো। কিন্তু এটি এখন প্রশ্ন ফাঁসের প্রধান উপায় হয়ে গেছে। শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, একটি চক্র এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস করছে। কারণ এটি সহজেই ফাঁস করা যায়। উত্তর সহজেই বলে দিয়ে নম্বর বাড়ানো সম্ভব। সে দিক বিবেচনায় এমসিকিউতে নম্বর কমানো ভালো হয়েছে।