সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেয়ার প্রতিক্রিয়া দূর করতে এ সিদ্ধান্ত সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম পুনর্বিন্যাসের নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অভিন্ন পদোন্নতির নীতিমালা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অষ্টম বেতনক্রমে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল দেয়ার বিধান বিলুপ্ত করায় সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এড়াতে যেসব সরকারি কর্মচারীর পদোন্নতির সুযোগ নেই বা সুযোগ সীমিত তাদের পদোন্নতির সুযোগ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অষ্টম জাতীয় বেতনক্রমে দেশের ১০ লাখেরও বেশি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ভবিষ্যত্ পদমর্যাদা নিয়ে বড় সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে এসব কর্মচারীরা উদ্বেগ ও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, সরকারের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলোচ্য পদের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত হয়ে অবসরকালে তারা যে পরিমাণ বেতন-ভাতা পান, তা ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির পদে যারা নিয়োজিত থাকেন প্রায় তার সমান হয়। এটিকেই তারা মর্যাদা বলে বিবেচনা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন যেসব দফতর-অধিদফতর ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে অধঃস্তন পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতির সুযোগ কম। কারণ এর বেশিরভাগ পদে প্রশাসন ক্যাডার, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ করে রাখা হয়। যেমন শিক্ষা অধিদফতর এখানে উপপরিচালক, পরিচালক এবং সর্বোচ্চ মহাপরিচালকের পদটি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ করা হয়। খাদ্য অধিদফতরের সর্বোচ্চ মহাপরিচালকের পদটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক থেকে শুরু করে মহাপরিচালক পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের বা শিক্ষা ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত। এরকম সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন যেসব দফতর-অধিদফতর সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে প্রেষণে নিয়োগের সুযোগ করে রাখায় অধঃস্তনরা পদোন্নতি পান না। মূলত এসব দফতর-অধিদফতর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যখন সৃষ্টি করা হয় তখন তার সাংগঠনিক কাঠামো ওইভাবেই তৈরি হয়। কিন্তু এতোদিন সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেলের সুযোগ থাকায় আর্থিক দিক থেকে তাদের কোনো ক্ষতি হতো না। এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম সংস্কার করে পদোন্নতির সুযোগ তৈরি করছে। কারণ পদোন্নতি ছাড়া অষ্টম বেতনক্রমে বেতন বৃদ্ধির সুযোগ রহিত করা হয়েছে। যে কারণে অন্যান্য ক্ষেত্র ছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকরা বিপাকে পড়েছেন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকার এখন সব প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রামে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত জারি করেছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, যেসকল পদে পদোন্নতির সুযোগ নেই বা সুযোগ সীমিত সেসকল ক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্বিন্যাস করতে অর্থবিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সচিবালয়ে কর্মরত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মুদ্রাক্ষরিক/ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদগুলোকে অভিন্ন বেতন স্কেল ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে অভিন্ন নীতিমালা করতে হবে। সরকারের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ পদ্ধতি ও পদোন্নতির বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যদিও এসব প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল ও সময় সাপেক্ষ। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুব বেশি সময় লাগবে না। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসের ৪ তারিখের মধ্যে বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।