দর্শনা অফিস: চোরাচালানের সচিত্র সংবাদ সংগ্রহ করতে দর্শনায় গিয়ে চুয়াডাঙ্গার দুজন সাংবাদিকসহ তিনজন হামলার শিকার হয়েছেন। দেশ টিভি’র চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি খাইরুজ্জামান সেতু ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার স্টাফ রিপোর্টার জহির রায়হানসহ তিনজনকে প্রকাশ্যে চোরাকারবারীরা হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে। সেতু ও জহির রায়হানকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনসহ পুলিশের পদস্থ কমকর্তারা হাসপাতালে আহত সাংবাদিকদের দেখতে যান এবং ঘটনার বর্ণনা শুনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।
অপরদিকে হামলার মূল হোতা ইয়াছিনকে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ গ্রেফতার করে দামুড়হুদা থানায় হস্তান্তর করেছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার সাথে জড়িত সকলকে অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
দর্শনা হল্টস্টেশন মাদক ও চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানী মালামাল পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হল্টস্টেশন। প্রতিটি যাত্রীবাহী ট্রেনে এ চোরাচালানী মালামাল বহন করছে চোরাকারবারীরা। পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের নাম ভাঙিয়ে টোল আদায়ের জন্য রয়েছে কথিত দালালরা। স্থানীয়দের দেয়া এসব তথ্যের ভিত্তিতে সচিত্র সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গতকাল বুধবার চোরাকারবারীদের হামলায় আহত হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দু সাংবাদিকসহ ৩ জন। হামলাকারীদের অভিযুক্ত হোতা ইয়াছিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। থানায় ইয়াছিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মামলা। দর্শনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে চোরাচালানী চক্রের নগ্ন নৃশংস হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্ত থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন দেশ টেলিভিশনের চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি দৈনিক মাথাভাঙ্গার স্টাফ রিপোর্টার খাইরুজ্জামান সেতু, জহির রায়হান সোহাগ ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গোষ্টবিহারের মোজাম্মেল হকের ছেলে নিরব। এ সময় সীমান্ত থেকে ভারতীয় চোরাচালানকৃত মালামাল ব্যাটারিভ্যানযোগে আনছিলো একদল চোরাকারবারী। চোরাকারবারীরা ভারতীয় মালামাল নিয়ে দর্শনা শ্যামপুর জোড়াবটতলা নামক স্থানে পৌছুলে সাংবাদিকরা ছবি তোলে। সাংবাদিকরা দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে পৌছুলে পেছন থেকে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ইয়াছিনসহ ৭/৮ জন। প্রকাশ্য দিবালোকে সাংবাদিকদের ওপর চোরাচালানীদের নগ্ন হামলায় হতবাক হয়ে পড়ে পথচারীরা। আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় দর্শনা শাপলা ক্লিনিক ও মুক্তি ক্লিনিকে। খবর পেয়ে দর্শনা আইসি ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হামলাকারী ইয়াছিনকে গ্রেফতার করেন। দর্শনা হল্টস্টেশনপাড়ার খোকন জোয়ার্দ্দারের ছেলে ইয়াছিনকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে হামলার সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করেছে। হামলার হুকুমদাতা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও ইয়াছিন বলেছে, এ হামলার সাথে জড়িত ছিলো একইপাড়ার আলীর ছেলে সুমন, আমিনুলের ছেলে চান্দা, আনিস উদ্দিনের ছেলে সুমন, রমজান কুলির ছেলে চান্দু ওরফে বাবু ও দক্ষিণচাঁদপুরের কায়েশ। ইয়াছিন হামলার হুকুমদাতার নাম এড়িয়ে গেলেও সে বলেছে, চোরাচালানী মালামাল ছিলো জয়নগরের চিহ্নিত চোরাকারবারী জামাই বাবলুর। এ ঘটনায় খাইরুজ্জামান সেতু বাদী হয়ে গতকালই ইয়াছিনসহ ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় কড়া নিন্দা, হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেছেন দর্শনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ উঠেছে, দর্শনা হল্টস্টেশন যেখানে মাদককারবারী ও চোরাচালানীদের অভয়ারণ্য। মাদক ও চোরাকারবারীচক্রের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে থাকে কথিত দালাল। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দর্শনা হল্টস্টেশন রুটে প্রচুর পরিমাণ ফেনসিডিল ও চোরাচালানী পণ্য পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পুলিশ ও বিজিবি মাদক বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও তাদের চোখের আড়ালে নাম ভাঙিয়ে মাদককারবারী ও চোরাচালানীদের কাছ থেকে বকরা আদায় করছে কথিত দালাল। এদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হলে হয়তো কিছুটা সুফল হতে পারে। কমতে পারে মাদক কারবার।