চুয়াডাঙ্গায় এবার ৯৫টি মণ্ডপ : এগিয়ে চলেছে প্রতিমা তৈরির কাজ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলায় আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে ৯৫টি মণ্ডপে প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চলেছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুসের সভাপতিত্বে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার চার উপজেলায় এবার ৯৫টি দুর্গামণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। গতবছর জেলায় পুজামণ্ডপ তৈরি হয়েছিলো ৮৯টি। গতবছরের হিসেব অনুযায়ী জেলায় এবার ৬টি পূজামণ্ডপ তৈরি বেশি হয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এবার গত বছরের ন্যায় ২৫টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলায় গত বছর ৩১টি পুজামণ্ডপ তৈরি হলেও এবার ৩০টি পূজামণ্ডপ করা হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলায় গত বছর ১৮টি পূজামণ্ডপ তৈরি হলেও এবার তা বেড়ে ২০টি হয়েছে। জীবননগর উপজেলায় গত বছর ১৫টি মণ্ডপ তৈরি হলেও এবার ৫টি বেড়ে ২০টি পূজামণ্ডপ হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা মালোপাড়া শ্রী শ্রী সার্বজনিন দুর্গাকালীমন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্যাম কুমার হালদার জানান, দুর্গাপূজার খরচ আগের তুলনায় এবার আরও বেড়েছে। গতবছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫শ কেজি চাল দেয়া হলেও এবার আরও বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি। একই কথা বললেন, জীবননগর সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির পূজা কমিটির সভাপতি পঙ্কজ কুমার দত্ত এবং সাধারণ সম্পাদক বসুদেব রক্ষিত। তারা দুজনই দাবি করেছেন, ৫শ কেজি চালের পরিবর্তে ১ হাজার কেজি চাল দিলে পূজার কাজে ব্যয় ভালো হয়।

এদিকে সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। এবারের পূজাকে আরো রঙিন করে তুলতে অপরূপ সুন্দর সব প্রতিমা তৈরি করছেন তারা। তবে কাচাঁমালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমা তৈরি করে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না কারিগররা। বাধ্য হয়েই পেশা বদল করতে হচ্ছে তাদের। আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে পরম যত্নে মূর্তিগুলোকে অবয়ব দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। বাঁশ ও খড় দিয়ে প্রতিমার অবকাঠামো তৈরির পর দক্ষ হাতে মাটির প্রলেপ দিচ্ছেন কারিগররা। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেও সঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাই ইতোমধ্যেই অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কারিগরদের অভিযোগ, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না তারা। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামের বিকাশ চন্দ্র পাল ও প্রল্লাদ পাল দু ভাই। তারা প্রতিমা তৈরি করেন। কিন্তু তারা জানালেন বর্তমানে প্রতিমা তৈরির জন্য যে কাঁচামাল লাগে সেগুলোর দাম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আর পারিশ্রমিক তো আমাদের বাড়েনি যা ছিলো তাই আছে। সব মিলিয়ে কাজ করে আর পোষাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছি। বাপ-দাদার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার জন্য না করলেই নাই, তাই মাঝে মধ্যে করি। ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর ভালকি গ্রামের অতুল কুমারও অভিন্ন কথা জানালেন।

অপরদিকে, দামুড়হুদায় এবার শারদীয় দুর্গোৎসব ২০টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ১৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিলো। দমুড়হুদা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। দিন-রাত কাদামাটি, খড়-কাঠ আর সুতলি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন শিল্পীরা। আগামী ১৮ অক্টোবর দেবির বোধনের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ মহোৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। দামুড়হুদা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার জানান, দর্শনা পৌরসভায় ৫টি, মদনা ইউনিয়নে ১টি, কুড়ুলগাছিতে ১টি, কার্পাসডাঙ্গায় ১টি, নাটুদায় ১টি, হাউলিতে ৩টি, দামুড়হুদা সদরে ৫টি, নতিপোতায় ২টি, জুড়ানপুরে ১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিমাশিল্পী কাজল মালাকার জানান, প্রতিমা ও এর প্রত্যেকটির অনুষঙ্গ তৈরি, নিখুঁতভাবে কাজ ফুটিয়ে তুলতেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০ আষাঢ় থেকে তারা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন, কাজ প্রায় শেষ। তিনি এবার ৩৫টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। এখন কেবল প্রতিমা গুলোর নকশা করা হচ্ছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই তৈরি করা দুর্গার প্রতিমাগুলোতে রং লাগিয়ে সুসজ্জিত করা হবে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। ষষ্ঠী পূজার দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জনের রাত পর্যন্ত এ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে থানার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরি থেকে প্রতিমা স্থাপন পর্যন্ত সব কার্যক্রম ও আচার-অনুষ্ঠান যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারে সে ব্যাপারে বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ির এসআইদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।