বিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ করে পরীক্ষা দিতে না পারায় : আলমডাঙ্গার প্রাগপুরে অভিমানী স্কুলছাত্রের আত্মহত্যা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার প্রাগপুর গ্রামের ১০ শ্রেণির মাতৃহীন ছাত্র বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। বিদ্যালয়ের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে না পারায় এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা দিতে না দেয়ায় সে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের প্রাগপুরের দরিদ্র মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন ওসমানপুর-প্রাগপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়ে গত ১ অক্টোবর থেকে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল পরীক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পাওনা সমুদয় বকেয়া বেতন ও অন্যান্য ফি পরিশোধ করে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের নোটিস দেয়। আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। গত ২ দিন ধরে যাদের নিকট বিদ্যালয়ের বেতন পাওনা রয়েছে তা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিলো। বেতন পরিশোধ না করলে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে আলমগীর হোসেন গতকাল সোমবার বিদ্যালয়ের বকেয়া ৯শ টাকা পরিশোধের জন্য তার পিতার নিকট চায়। পিতা ছেলেকে ৯শ টাকা দিতে পারেনি। দিয়েছে ৫শ টাকা। গতকাল সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট বকেয়া ৯শ টাকার মধ্যে ৫শ টাকা নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণি রাজি হননি। পরে আলমগীর পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফেরে।
সহপাঠীরা অভিযোগ করে বলে, বকেয়া বেতন ও পরীক্ষা ফি না দিতে পারাই স্কুলের শিক্ষক আ. রহিম আলমগীরকে কথার ছলে অপমান করে। এমন কি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। সহপাঠীদের সামনে অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেই বলে তাদের দাবি।
এ ধরনের অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গণি বলেন, পরীক্ষা দিতে না পারার কারণে সে আত্মহত্যা করেছে এমন অভিযোগ মিথ্যা। গ্রামের বিদ্যালয়ে বেশিরভাগ বকেয়া বেতন অনাদায়ি থাকে। মাঝে-মধ্যে একটু কড়াকড়ি করতে হয় বাধ্য হয়েই। আরও শিক্ষার্থীরা রয়েছে যারা বিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। বেশ কয়েকজন পরীক্ষা দিচ্ছে না। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে আলমগীর উঠোনের তারে শুকাতে দেয়া লুঙ্গি ধরে টান দিলে লুঙ্গি ছিড়ে যায়। এ ঘটনায় তার সৎ মা ও পিতা বকাবকি করে। এতে অভিমানে-ক্ষোভে হয়তো সে আত্মহত্যা করতে পারে। তবে যে কারনেই হোক এ আত্মহত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মধু বলেন- বকেয়া বেতন দিতে না পারায় একজন দরিদ্র ছাত্রকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেয়া অসভ্য আচরণের পর্যায়ে পড়ে। শিক্ষক সমাজের কাছে এটা প্রত্যাশিত না। গতকাল রাতে আলমগীরকে স্থানীয় গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। এদিকে, এ আত্মহত্যার কারণে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আচরণ অমানবিক দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।