হাজরাহাটী হেঁশেল থেকে কলপাড়ে : হঠাত পড়ে আর উঠলো না ক্ষুধে রাঁধুনি
জহির রায়হান: আরমিনা চুয়াডাঙ্গা হাজরাহাটি অঙ্গীকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। বয়স আর কতো? টেনে টুনে দশ। অতোটুকু বয়সেই হেঁশেল সামলাতে যেমন পরদর্শী হয়ে উঠেছিলো সে, তেমনই মাঠ থেকে ধানের বোঝা আনা, উঠোনে ধান ঝেড়ে বস্তায় ভরার কাজেও ছিলো পাক্কা গিন্নি। মুখে লেগেই থাকতো মিষ্টি হাসি। গতকাল আকস্মিক মৃত্যুর পরও সেই হাসি যেন লেগে ছিলো ওর মুখে।
গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে ছোট্ট শরীরে বড়দের মতো ধকল নিতে গিয়ে কী যে হলো, বুঝলো না কেউ। ভাত রান্নার পানির জন্য হেঁশেল থেকে কলপাড়ে গিয়ে পড়ে গেলো সে। উঠলো না আর। চলে গেলো না ফেরার দেশে। গতকালই বেদনাবিধূর পরিবেশে জানাজা শেষে করতে হলো দাফন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটির খবির উদ্দীন জোয়ার্দ্দারের ছোট মেয়ে আরমিনা খাতুন অঙ্গীকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তো। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়ির খুঁটিনাটি করতে সিদ্ধহস্ত ছিলো আদরের ছোট মেয়ে। গতকাল রোববার সকালে মাঠ থেকে ধান আনা, উঠোনে ঝাড়াঝুড়োসহ নানা কাজেই পিতা-মাতাকে সহযোগিতা করছিলো সে। মাতা-পিতা যখন ধান ঝাড়া গোছানো নিয়ে ব্যস্ত তখন সে রান্নার জন্য হেঁশেলের দিকে যায়। ভাত রাঁধতে তাকে তার মা-ই পাঠায়। ভাত রান্নার জন্য হেঁশেলের গোছগাছ শেষে পানির জন্য কলপাড়ের দিকে যেতেই পড়ে যায় সে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে। পথিমধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ক্ষুধে রাঁধুনি আরমিনা।
মৃতদেহ নিজ বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হলে নিকজনদের পাশাপাশি পড়শিদের কান্নায় গোটা গ্রামের পরিবেশটাই ভারী হয়ে ওঠে। প্রশ্ন ওঠে কেনো পড়ে গেলো, ওতোটুকু সময়ের মধ্যে কেনোই বা মারা গেলো সে? এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মেলেনি। কেউ বলেছে, ভ্যাপসা গরমের কারণে শিশু আরমিনা অসুস্থ হয়ে মারা গেলো। কেউ বলেছে, পানিতে পড়ার কারণেই দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বাদ আসর জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।