মাথাভাঙ্গা মনিটর: যে জাপানিকে হত্যাকাণ্ডের দায় ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস স্বীকার করেছে বলে দাবি উঠেছে সেই কুনিও হোশি তিন মাস আগে মুসলিম হয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা বলছেন। রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় যে বাড়িটিতে এ বিদেশি থাকতেন; তার পাশের মসজিদের ইমাম এবং ওই এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। মসজিদে টুপি পড়ে অনেকের সাথে ৬৬ বছর বয়সী এ জাপানির একটি ছবিও হাতে এসেছে। মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু বলেন, গত রোজার ঈদের আগে ২৭ রমজানের দিন আছরের নামাজের পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এ সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। ইসলাম গ্রহণ করে কুনিও ‘গোলাম কিবরিয়া’ নাম নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। এরপর থেকে তিনি প্রতি গত শুক্রবার বাড়ির পাশের এ মসজিদটি থেকে জুমার নামাজ আদায় করতেন। গত কুরবানির ঈদে মুন্সিপাড়া কবরস্থান মাঠে ঈদের নামাজও পড়েছিলেন। মুন্সিপাড়া এলাকার আরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান রিপুও বলেন, তাকে কয়েক বার জুমার নামাজ পড়তে দেখেছি। মুন্সিপাড়া কাদেরিয়া জামে মসজিদের ইমাম সিদ্দিক হোসেন বলেন, গত রমজান মাসে তিনি আমার কাছেই ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সময় এলাকার আরও ১২-১৩ জন মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। তিনি কয়েকবার আমার পেছনে নামাজও আদায় করেছেন।
কুনিও হোশি: রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়া বালা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কুনিও। জাকারিয়ার দু ভাই জাপানে থাকেন। সেই সূত্রে তার বাংলাদেশে যোগাযোগ। কুনিও বাংলাদেশে এসে একাই থাকতেন বলে জাকারিয়া জানান। তিনি বলেন, কাউনিয়ায় একটি ঘাসের খামার গড়ে তোলার কাজ করছিলেন এ জাপানি। ওই খামারে যাওয়ার পথেই মুখোশধারী তিন দুর্বৃত্ত কুনিওকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিলো ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ওই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে বলে দাবি উঠে। কুনিও হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বও আইএস নিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। আইএস এর টুইট উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জোটের দেশগুলোর নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। মুসলমানদের মাটিতে তাদের নিরাপত্তা বা জীবিকা থাকবে না। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইএসের সংশ্লিষ্টতার খবর নাকচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ দলটির তৎপরতা বাংলাদেশে নেই। ‘কুনিওর শত্রু ছিল না’ জাপানি নাগরিক কুনিওকে নিপাট ভদ্রলোক বলেই জানেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নে আলটারি কাচু গ্রামের মানুষ। যে স্থানটিতে কুনিও ঘাস আবাদ করছিলেন, তার আশপাশের মানুষ জানান, ভাঙা বাংলায় সবার সাথে কথাও বলতেন এ বিদেশি। আজিজ মিয়া নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, তিনি প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসতেন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতেন। বেশ হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। কারও সাথে দেখা হলে সালাম দিতেন, কেউ সালাম দিলে জবাবও দিতেন।
কুনিওর ঘাসের খামার: এতো ভালো একজন লোককে কেন এভাবে মেরে ফেলা হলো, তা গ্রামের কেউই বুঝে উঠতে পারছে না। আব্দুল হক নামে আরেকজন বলেন, প্রতিদিন হিরা নামে একজনের সাথে রিকশায় এলেও কোরবানি ঈদের পর থেকে একাই আসছিলেন তিনি। জাকারিয়ার শ্যালক হীরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন। কয়েল নামে এক জাতের ঘাস চাষ করছিলেন কুনিও, যেটি এ অঞ্চলে নতুন। ঘাসের খামারটি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দু একর জমিতে কয়েল প্রজাতির এ ঘাস, দেখতে অনেকটা ভুট্টা গাছের মতো। ঘাসগুলো ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা। আজিজ মিয়া বলেন, একবার মাঠে কাজ করার সময় তিনি বলছিলেন, জাপানে এ ঘাসটি ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা হয়, এখানে ১০ থেকে ১২ ফুট হওয়ায় তিনি খুব খুশি ছিলেন।