ইতালীয়র পর জাপানের নাগরিককে গুলি করে খুন

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় ইতালির নাগরিক খুনের পাঁচ দিনের মধ্যে রংপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হলেন এক জাপানি নাগরিক। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের কাচু আলুটারী গ্রামে জাপানি নাগরিক হোসি কোনিওকে (৬৫) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লাকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। তাভেল্লার খুনিদের মতো রংপুরেও হোসি কোনিওকে হত্যা করতে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে আসে। পুলিশ এ ঘটনায় পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লা হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় এ হত্যার ঘটনা ঘটলো। এ দুটি হত্যার ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা। সরকারি মহলে আশঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত হওয়াও এ চক্রান্তের অংশ। বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে বলে সরকারের কাছে প্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

পুলিশ সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট ভারতের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন হোসি কোনিও। তার পাসপোর্ট নম্বর টি কে ১২৫৯৫৫২। তার ভিসার মেয়াদ ছিলো আগামী বছরের ১৩ মে পর্যন্ত। তবে তিনি ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বাংলাদেশে আসেন। তিনি রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ায় ব্যবসায়িক অংশীদার গোলাম জাকারিয়া বালার বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি অবিবাহিত বলে সূত্র জানায়।

খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ, রংপুর পুলিশ, ৱ্যাব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক পিপিএম ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্কভাবে কাজ করছেন। খুনের মোটিভ নিয়ে এখনই নির্দিষ্ট করে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। পুলিশসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভাড়া বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ী অংশীদার গোলাম জাকারিয়া বালা, হুমায়ুন কবীর হীরা, মতিন, রিকশাচালক মোন্নাফ মিয়া ও খুনের ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির মালিক মুরাদ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। নিহত কোনিওর লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়নি।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউনিয়া উপজেলার সরাই ইউনিয়নের কাচু আলুটারী গ্রামে হোসি কোনিওর একটি প্রকল্প আছে। সেখানে ২ একর জমি লিজ নিয়ে নেপিয়ার জাতীয় ঘাস এবং এর রস থেকে চিনি উৎপাদনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেন তিনি। কোনিওর ব্যবসায়িক অংশীদার হুমায়ুন কবীর হীরা জানান, পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ করে তারা ওই ঘাস থেকে চিনি উৎপাদনে যেতেন। কিন্তু তার আগেই এ হত্যার ঘটনা ঘটলো। তিনি জানান, কোনিওর সাথে জাপানে বসবাসকারী রংপুরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা আকতার জামিল মিশনের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মিশনের বন্ধু হুমায়ুন কবীর হীরার সাথে পরিচয়। আকতার জামিল মিশনের ভাই গোলাম জাকারিয়া বালার বাসায় ভাড়া থাকতেন কোনিও। তিনিও তার ব্যবসায়িক অংশীদার।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সকালে ভাড়া বাসা থেকে বের হন জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও। সকাল ১০টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। প্রতিদিনের মতো দৈনিক চুক্তিতে ভাড়া করা মোন্নাফ মিয়ার রিকশা করে সেখানে যাচ্ছিলেন তিনি। মুরাদ মিয়ার বাড়ির কাছাকাছি রংপুর-হারাগাছ সড়কের পাশে হত্যাকারীরা তার রিকশার গতিরোধ করে। এ সময় রিকশাটি এগিয়ে যেতে থাকলে দুজন মুখোশপরা অস্ত্রধারী মুরাদ মিয়ার বাড়ির কাছে তাকে রিকশা থেকে নামিয়ে পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পর প্রথমে তার ডান হাতে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তার ঘাড়ে ও বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে পরপর আরও দুটি গুলি করে। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার সময় হত্যাকারীদের অপর সহযোগী সড়কে একটি ডিসকভার মোটরসাইকেলে অপেক্ষা করছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোটরসাইকেলটিতে প্রেস লেখা স্টিকার ছিলো। মুখোশপরা তিন খুনি হত্যাকাণ্ড শেষে ঠাণ্ডা মাথায় সড়কে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে করে হারাগাছ এলাকার দিকে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কিছুক্ষণ সেখানে পড়েছিলেন হোসি কোনিও। পরে ঘটনাস্থল সংলগ্ন বাড়ির মালিক মুরাদ মিয়া ও বাড়ির লোকজনসহ এলাকাবাসী এগিয়ে এলেও কাছে যেতে সাহস পাননি। এরপর ঘটনাস্থলের কাছেই সড়কের পাশের মুদি দোকানদার মোস্তফা হোসেন এলাকাবাসীর সাহায্যে অটোরিকশায় হোসি কোনিওকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। এর মধ্যে ব্যবসায়িক অংশীদার হুমায়ুন কবীর হীরাকে মোবাইলফোনে ঘটনা জানানো হয়। তিনি কোনিওকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে পিকআপ ভ্যানে নেন। হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি শুনেছেন জাপানি প্রতিনিধি দল আজ রংপুরে আসছেন। তাদের সাথে একজন চিকিৎসকও আসার কথা রয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত আজ করা হবে।

 japan Rangpur1