আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কথা, জনসংখ্যা আমাদের মহাসম্পদ। কথাটা বিশেষভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুনতে পাওয়া যায় এবং তা অর্থনৈতিক বিচারে। আর সেটা প্রধানত বিদেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও সন্নিহিত অঞ্চলে কর্মরত দক্ষ-অদক্ষ জনসংখ্যার পাঠানো অর্থের হিসাব করে। এবং তা বিদেশি মুদ্রা অর্জনের সুবাদেও বটে। তবে ভূখণ্ডের আয়তন ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা বিচারে অতিরিক্ত জনসংখ্যা যে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ভারও হতে পারে তার প্রমাণ তো বাংলাদেশ। যেমন তত্ত্বগত, তেমনি বাস্তব সমস্যা বিচারে। অর্থনৈতিক বিচার, দুঃসহ বেকারত্ব তার প্রমাণ। প্রমাণ সম্প্রতি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা অভিবাসী শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থা ও করুণ মৃত্যু। তবে বাংলাদেশে এ ঘটনা বেশ কিছুকাল আগে থেকেই শুরু। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার জঙ্গলে অভিবাসী শিবির ও গণহত্যার লোমহর্ষক ঘটনাবলি তা আমাদের বুঝিয়ে দেয়। মানুষ চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়লে তবেই বেকারত্বের বোঝা ঝেড়ে ফেলতে অপরাধী চক্রের হাতে ধরা দেয়, জীবন বাজি রেখে অচেনা-অজানা সাগরে পাড়ি জমায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যা তখন জাতির জন্য, রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। এবং তা সুশাসন বা দুঃশাসন যে অবস্থাতেই হোক না কেন। বাংলাদেশ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ছোট্ট আয়তন, তাতে ঘিঞ্জি বসবাস। স্বাস্থ্যগত সূচকের নিরিখেও তা অনাকাঙ্ক্ষিত। অর্থনৈতিক বিচারে তো বটেই। ফলে সমাজে নানা অপরাধপ্রবণতার জন্ম। শুধু প্রবণতাই নয়, বাস্তবে তেমন উদাহরণ বিস্তর। মানবিক বিপর্যয়ও সেখানে উদাহরণ সৃষ্টি করে। ফলে রুখতে হবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপজ্জনক হার।