এসএমএসে তথ্য যাচাই শুরু ১৫ অক্টোবর ১ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক বায়োমেট্রিক্স : ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেশিনে আঙুলের ছাপে সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক
স্টাফ রিপোর্টার: মোবাইলফোনের সিমকার্ড নিবন্ধনে ভয়াবহ জালিয়াতির সন্ধান মিলেছে। ভুয়া একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে হাজার হাজার সিম নিবন্ধন দেখিয়েছে মোবাইল অপারেটররা। শুধু ১০০ ভুয়া এনআইডির বিপরীতে ৬টি মোবাইল অপারেটরের ৫ লাখ সিম কার্ড তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ ডিজিটের ভুয়া একটি এনআইডি (নম্বর: ১৯৮৪৪৪২৫৮৮৩৬৯৮৭১২) দিয়ে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ১১৭টি মোবাইল সিম কার্ড নিবন্ধন করা হয়েছে। ওই ১০০ ভুয়া এনআইডির মধ্যে যেটি দিয়ে সবচেয়ে কম সংখ্যক সিম নিবন্ধন করা হয়েছে তার সংখ্যা ১৮২২। বর্তমানে চলমান সিমের নিবন্ধন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রণালয়ে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মোবাইল অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব তথ্য উত্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একটি এনআইডি দিয়ে ১১ হাজার ৮৬৬টি, তৃতীয়টি দিয়ে ১১ হাজার ৩২৮টি, চতুর্থটি দিয়ে ৯ হাজার ৬৬৬টি, পঞ্চমটি দিয়ে ৯৫৯১টি, যষ্ঠটি দিয়ে ৮৯১১টি, সপ্তমটি দিয়ে ৮২০৭টি, অষ্টমটি দিয়ে ৭ হাজার ৮৬২টি, নবমটি দিয়ে ৭ হাজার ৭৯৭টি এবং দশমটি দিয়ে বিপরীতে ৭ হাজার ৭২৫টি সিম নিবন্ধন দেখানো হয়েছে। ১০টি এনআইডি দিয়ে ৯৭ হাজার ৭০টি সিম নিবন্ধন করা হয়। যেসব এনআইডি দিয়ে সিমগুলো নিবন্ধন করা হয়েছে তার সবকটিই ভুয়া। এভাবে আরো ৫টি এনআইডি দিয়ে প্রায় ৪২ হাজার, ৬টি এনআইডি দিয়ে ৩৯ হাজার, ১৫টি এনআইডি দিয়ে ৮৭ হাজার, ১৪টি এনআইডি দিয়ে ৬৬ হাজার, ১৬টি এনআইডি দিয়ে ৫৭ হাজার ৫শ, ২৭টি এনআইডি দিয়ে ৭০ হাজার সিম নিবন্ধন দেখানো হয়েছে। একশ ভুয়া এনআইডির বিপরীতে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫৭০টি সিম নিবন্ধন করা হয়। এছাড়া আরো একশ ভুয়া এনআইডি দিয়ে দেড় লাখ সিম নিবন্ধন করা হয় বলে সিমের নিবন্ধন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় পাওয়া গেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ইসির এনআইডি শাখা সিমের নিবন্ধন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দেখভাল করছে।
৭৫ শতাংশ সিমই সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয়: বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, গ্রাহকের হাতে থাকা প্রায় ১৩ কোটি সিমের মধ্যে ১ কোটির তথ্য সরকার হাতে পেয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয়। এনআইডিতে জমা দেয়া ১ কোটি সিমের নিবন্ধন তথ্যের মধ্যে গ্রামীণফোন ২২ লাখ, বাংলালিংক ২৩ লাখ ৫৫ হাজার, রবি ১৮ লাখ, টেলিটক ১৬ লাখ, এয়ারটেল ১৪ লাখ, সিটিসেল ৪ লাখ সিমের নিবন্ধন তথ্য জমা দিয়েছে। দেশে বর্তমানে চালু থাকা সিমের বিপরীতে প্রায় আট শতাংশ সিমের তথ্য পাওয়া গেছে। যে ১ কোটি সিমের তথ্য জমা পড়েছে এর মধ্যে ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০টি সিম সঠিক জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন করা হয়েছে। আর বাকি ৭৬ লাখের ওপর সিম সঠিকভাবে নিবন্ধন করা হয়নি।
এসএমএসে সিমের তথ্য যাচাই শুরু ১৫ অক্টোবর: সিমের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠাবে মোবাইলফোন অপারেটররা। এ কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। ২০১২ সালের আগে যেসব সিমের নিবন্ধন হয়েছে, মূলত সেগুলো যাচাই-বাছাই করতেই এসএমএসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ২০১২ সালের আগে যেসব সিমের নিবন্ধন হয়েছে, মোবাইল অপারেটররা সেসব গ্রাহককে ১৫ অক্টোবর থেকে এসএমএস পাঠাবেন। আইডি নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চাইবেন। একটি কোড থাকবে। গ্রাহকদের দেয়া তথ্য অপারেটররা পাঠাবেন এনআইডিতে। সেখানে হবে যাচাই-বাছাই, এরপর চূড়ান্ত নিবন্ধন। আরেকটি পদ্ধতিও থাকবে। একটি কোডসহ অন্য এসএমএসে যেকোনো সময়ের গ্রাহকই চাইলে নিজের সিমের তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন। তার সিমটি আর কোথাও কেউ নিবন্ধন করেছে কি-না সেটিও নিজের নিরাপত্তার জন্য জেনে নেয়া যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনগণ ও রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে এ কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি। এ পর্যন্ত যে চিত্র আমরা পেয়েছি, তাতে সবাই উদ্বিগ্ন। ভয়াবহ চিত্র শঙ্কিত করেছে। হয়তো চিত্র আরও ভয়াবহ হবে, কিন্তু কাজ চলবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন একটি অবৈধ সিমের জন্যও ভোগান্তিতে না পড়েন, সেটিই উদ্দেশ্য।
১ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক বায়োমেট্রিক্স: মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনে পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি (আঙ্গুলের ছাপ) চালু হচ্ছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে মোবাইল অপারেটররা নিজেদের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালু করবে। সচেতন গ্রাহকরা নিজ উদ্যোগে এখানে এসে নিজ নিজ সিমের নিবন্ধন করতে পারবেন। তথ্যগুলোও যাচাই-বাছাই করতে পারবেন।
১৬ ডিসেম্বর থেকে মেশিনে আঙ্গুলের ছাপে সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেশিনে আঙ্গুলের ছাপে (বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি) সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, চূড়ান্তভাবে এ পদ্ধতি শুরু হলে প্রাধান্য পাবে ভুয়া আইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধনকারীরা এবং সঠিক এনআইডির বিপরীতে অস্বাভাবিকভাবে সিম নিবন্ধনকারীরা। এভাবে নিশ্চিত হতে পারবো সিমগুলো সঠিক মালিকই ব্যবহার করছেন। এ সম্পর্কিত তথ্যগুলো এনআইডি, মোবাইল অপারেটর ও কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ে থাকবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সবাইকে নিজের নিরাপত্তায় নিশ্চিন্ত হতে হবে। বৈধভাবেই অনেকে একাধিক সিম রাখেন, তাদেরও সুযোগ দিতে চাই। এরপরও না হলে বাধ্য হয়ে অকার্যকর করে দেয়া হবে সিম। তবে বৈধভাবে কয়টি পর্যন্ত সিম রাখতে পারবেন একজন গ্রাহক, সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তারানা হালিম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক এনআইডি ব্যবহার করে এতো সিম কীভাবে হলো, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়।