কুষ্টিয়ায় অপহরণের পর ব্যবসায়ীকে নির্যাতন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনকারী কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভেতর ওমর ফারুক (৩৪) নামে এক ব্যবসায়ীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ওই ব্যবসায়ীকে বটতৈল মোড় থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে শটগানের দু রাউন্ড গুলি ছুড়ে অপহরণ করা হয়। এরপর তাকে কেএনবির ভেতরে এনে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ব্যবসায়ীকে উদ্ধার ও অস্ত্রসহ তিনজনকে আটক করে। উদ্ধার ব্যবসায়ী ওমর ফারুক কুমারখালী উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের ছমির হোসেনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার বিকেলে প্রকাশ্য বটতৈল মোড় থেকে শাদা মাইক্রোবাস (যার নং ঢাকা মেট্রো চ-৫৩৯২১৬) থেকে শটগান হাতে নেমে কেএনবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক কামরুজ্জামান ও তার ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ী ওমর ফারুককে অপহরণ করার সময় এলাকাবাসী তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ডিবি পরিচয় দেন। এ সময় কামরুজ্জামান দু রাউন্ড গুলি ছুড়ে ফারুককে তুলে নিয়ে যান। পরে ব্যবসায়ী অপহরণের খবরটি কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরা গেলে ওই ফ্যাক্টরির গেট খোলা হয়নি। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা এবং এলাকাবাসী খবর দিলে ঘটনাস্থলে যেয়ে হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ী ওমর ফারককে উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় পুলিশ অপহরণের কাজে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র শটগানটি জব্দ করে।

জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী ওমর ফারুক কয়েক বছর আগে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার পাতরাইল দিঘির পার এলাকার খালেক মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে সুদে ৪০ লাখ টাকা নেন। শর্তানুযায়ী টাকা ফেরত দিতে না পারায় কেএনবি মালিকের মাধ্যমে মেহেদী হাসান তাকে তুলে এনে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্রসহ কেএনবি মালিক ও আরও দুজনকে আটক করে। এরপর শুরু হয় দেন-দরবার চলে মধ্য রাত পর্যন্ত। দফারফার পর ওসির আতিথেয়তা শেষে জব্দকৃত শটগানটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন কেএনবি মালিক কামরুজ্জামান নাসির। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টাকা দিলে বাঘের চোখ মেলে। আর আমাকে আটকে রাখে এই ক্ষমতা কার?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেএনবি’র এক কর্মচারী বলেন, বটতৈলে তার ফ্যাক্টরির মধ্যে রয়েছে টর্চার সেল। বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষকে ধরে এনে তাদের অমানবিক টর্চার করা হয়। আবার টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় তুলে আনা হয় অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে। এ ছাড়াও ডিবি পরিচয়ে মানুষ অপহরণ  করে হাত পা মুখ বেঁধে আনা হয় তার ফ্যাক্টরির গোপন কামরায়। এ তালিকায় স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সম্পাদক এমনকি আদিবাসী পর্যন্ত  রয়েছে। নিয়মিত টর্চার সেলে সোমবারের শিকার ছিলেন ব্যবসায়ী ফারুক। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, কেএনবি কারখানার ভেতর থেকে আহত অবস্থায় ওমর ফারুককে উদ্ধার করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়েছিলো। রাতেই উভয় পক্ষের লোকজন এসে মীমাংসা করে নিয়েছে। যেহেতু তাদের উভয় পক্ষের কোনো অভিযোগ নাই  সেহেতু তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে কেএনবি এগ্রো ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আকরাম উদ্দীন বলেন, ওমর ফারুকের কাছে কোটি টাকা পাওনা আছে। এজন্য একটু ঝামেলা হয়েছিলো। দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধরের ব্যাপারে তিনি জানান, ‘মারধর করা হয়েছে। তবে আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত ছিলো।’ এ ব্যবস্থাপক আরও জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজে বৈঠকে বসে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় ১১ নেতার নামের ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। অথচ সোমবার এক সময়ের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী বর্তমানে কেএনবি নামের একটি মুরগির খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক কামরুজ্জামান পুলিশের হাতে জব্দ হওয়া অস্ত্র মধ্যরাতে ফিরে পেলেন।

Leave a comment