চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘ ৯ বছর ধরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ : প্রকল্প চালুর দাবি

 

রফিকুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করায় জেলার স্বাক্ষরতা কার্যক্রমের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। জেলার ১৪ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত বয়সী নিরক্ষর মানুষের জ্ঞানদান করতে অবিলম্বে প্রকল্পের কার্যক্রম চালুর দাবি উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অভ্যন্তরে পুরাতন ভবনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদফতরের আওতায় জেলা কোঅর্ডিনেটরের অধীনে জেলার নিরক্ষর মানুষের জ্ঞানদানের জন্য ১৯৯৩ সালের ৫ জুন হতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জহুরুল হক। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। আর ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কোঅর্ডিনেটরের পদ পরিবর্তন হয়ে সহকারী পরিচালক করা হয়। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে শেখ মো. সুরুজ্জামান ঝিনাইদহ জেলার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি মাগুরা জেলারও দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে মাসে হয়তো একদিন চুয়াডাঙ্গা অফিসে আসার সুযোগ হয় সহকারী পরিচালকের। কয়েকদিন খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গা অফিসে তিনি গত ৯ সেপ্টেম্বর এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অফিসের অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল মান্নান ও অফিস সহায়ক শহিদুল ইসলাম নামে আরো দুজন কর্মরত রয়েছেন।

শহিদুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ ২০০৬ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলায় নিরক্ষর মানুষের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিলো। ওই প্রকল্পের ৪টি মোটরসাইকেল ও কম্পিউটার অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষক-অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব জানান, ‘সরকার নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়তে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো তা সফল করতে অবিলম্বে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।’ শিক্ষাবিদ আতিয়ার রহমানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে- তিনি ওই সময় নিরক্ষরমুক্ত হওয়ার যে হার প্রকাশ করা হয়েছিলো তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে জানতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক শেখ মো. সুরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলন কর্মসূচির আওতায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় জুলাই ১৯৯৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ পর্যন্ত ‘আলোকিত চুয়াডাঙ্গা’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো যথাক্রমে- নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবেশ উন্নয়ন, আয়বর্ধক কর্মসূচি ইত্যাদি। এ প্রকল্পের অধীনে অত্র জেলায় নিরক্ষরতা দূরীকরণ কার্যক্রমে অগ্রগতির হার ছিলো ৯৪%, যা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চতম। আর এ সাফল্য অর্জনের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদকপ্রাপ্ত হন।

১৮ বছর পর ২০১৫ সালে এসে জেলায় সাক্ষরতার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬১ শতাংশে। ‘আলোকিত চুয়াডাঙ্গা’ প্রকল্প কতোটা সফল হয়েছিলো তা এ পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার হয়ে যায়। শিক্ষানুরাগীরা বলেছেন, তৎকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার নিরক্ষরতা দূরীকরণের নামে যে হরিলুট হয়েছিলো তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়।