চুয়াডাঙ্গায় একযুগ ধরে সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পুলিশ ক্যাম্পের দখলে

School & Camp Picture (6)

জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘ একযুগ ধরে সাতটি বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে রেখেছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। ফলে কোমলতি শিশু শিক্ষার্থীরা গাছতলায় বসে ক্লাস করছে এ যাবত। এতে বিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগ আর ভোগান্তির কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়েছে। কোনো কোনো শিশু আগ্নেয়াস্ত্র আর পুলিশ দেখে ভয়ে স্কুলে যায় না। শিক্ষকরাও পড়েন নানা সমস্যায়। কবে নাগাদ বিদ্যালয়গুলো থেকে পুলিশ ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হবে তাও জানে না নিরুপায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ সুপার কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ১৭টি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ১টি, দামুড়হুদা মডেল থানায় ৪টি ও আলমডাঙ্গা থানায় ২টি পুলিশ ক্যাম্প সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে আছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার শম্ভুনগর ক্যাম্পের অবস্থান শম্ভুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, ‘পুলিশ শ্রেণিকক্ষগুলো দখল করে রাখায় প্রায় আড়াইশ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অন্তর্গত গয়েশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভুক্তভোগী বিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। শিক্ষার্থীরা ধুলোর ওপর বস্তা বিছিয়ে বসে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম জানান, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের দেখে ভয় পায় এবং বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।’ সহকারী শিক্ষক মাফরোজা খাতুন জানান, ‘শ্রেণিকক্ষে স্বাভাবিকভাবে পাঠদান করতে পারি না। একটি মাত্র টিউবওয়েলের পানি পান করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী পুলিশ সদস্যদের ভয়ে পিপাসা পেলেও পানি পান করতে যায় না। রোদে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়। বৃষ্টি হলেই বাড়ে ভোগান্তি। অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে।’

দলিয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও দখল করে আছে একটি ক্যাম্প। এখানেও একই সমস্যা। সহকারী শিক্ষক মুসলিমা খাতুন জানান, একটি মাত্র বাথরুম থাকায় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে সেটা ব্যবহার করতে লজ্জা পাই আমরা। অন্যদিকে পুলিশেরও অভিযোগের অন্ত নেই। ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই জাকির হোসেন জানান, সারারাত ডিউটির পর সকালে ঘুমোতে গেলে ছাত্র-ছাত্রীদের চেঁচামেচিতে সমস্যা হয়। এ উপজেলার ছুটিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ক্যাম্পের দখলে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব জানান, ২০০৩ সালে আমাদের বিদ্যালয়ে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সেই থেকে নানা ভোগান্তির শিকার আমরা। সহকারী শিক্ষক রুবিনা খাতুন জানান, বিদ্যালয়ে নিজস্ব বিদ্যুত থাকা সত্ত্বেও সেটি ক্যাম্প ভোগ করে আসছে। আমরা বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

দুলালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও আছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাউদ আলী জানান, অফিসকক্ষ ক্যাম্পের সাথে হওয়ায় বারবার পুলিশ সদস্যদের মাঝ দিয়ে অফিসে যেতে হয়।

এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে আছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হয় বলে জানালেন দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন আইনসিদ্ধ নয়। সাময়িকভাবে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও তা দীর্ঘদিন দখলে রাখায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’ পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান জানান, ‘চুয়াডাঙ্গা একটি সন্ত্রাসকবলিত জেলা ছিলো। সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। নিজস্ব জমিতে পুলিশ ক্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে ক্যাম্পগুলো স্কুল থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।’

Leave a comment