শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাহাঙ্গীর আলম কাওছার : প্যাডির স্বীকারোক্তি

Gangni pic_18.09.15_(9)

গাংনী প্রতিনিধি: সর্বজনের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দুর্বত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বণিক বার্তা পত্রিকার সহকারী ম্যানেজার (মার্কেটিং) জাহাঙ্গীর আলম কাওছার (৩৮)। গতকাল শনিবার তার শ্বশুর পরিবারের উদ্যোগে প্রথম দফায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গাংনী আল মদিনা মাদরাসা প্রাঙ্গণ ও সকাল সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় দফায় তার নিজ গ্রাম গাংনী পৌরসভার পূর্বমালসাদহ গ্রামে নামাজে জানাজা শেষে পূর্বমালসাদহ কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় কাওছারের।

পূর্বমালসাদহ গ্রামে তার নামাজে জানাজা পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, গাংনী পৌর মেয়র আহমেদ আলী, ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান হাফিজ, নিহতের শ্যালক আশরাফুল ইসলাম। বণিক বার্তা সম্পাদকের পক্ষে বণিক বার্তা জেলা প্রতিনিধি দৈনিক মাথাভাঙ্গা গাংনী প্রতিনিধি মাজেদুল হক মানিক। কাওছারের শিশুকাল থেকে কর্মময় জীবনের বর্ণনা দিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবক বশির আহম্মেদ।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, জেলা যুবলীগ নেতা খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশন পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, জুলফিকার আলী কানন, তৌহিদ-উদ-দৌলা রেজা, মাহবুব আলম, মোমিনুল ইসলাম, শিক্ষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবিসহ সমাজের সকল স্তরের মুসল্লি। এলাকার হাজার হাজার জনতা ছুটে এসেছিলেন তাদের প্রিয় ব্যক্তি কাউছারকে এক নজর দেখার জন্য।

পুলিশের হাতে গ্রেফতার গাংনী এলাকার ফয়সাল আহমেদ ওরফে প্যাডি ও তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবি জানান জানাজায় উপস্থিত মুসল্লিরা। আত্মস্বীকৃত ঘাতক প্যাডি ও তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবিতে আজ রোববার বিকেল ৪টায় গাংনী বাসস্ট্যান্ড চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর পক্ষে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বশির আহম্মেদ।

এদিকে কাওছারের মরদেহ গতকাল সকালে ঢাকা থেকে লাশবাহী একটি ফ্রিজিং গাড়িতে নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় সন্তানের মরদেহ দেখে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন মা আনজিরা খাতুন। নির্বাক হয়ে পড়েন বৃদ্ধ দাদা-দাদি ও বাবা। প্রিয় মানুষটির মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য সেখানে ভিড় করেন এলাকার অসংখ্য নারী-পুরুষ।

নিহত জাহাঙ্গীর আলম কাওছার পূর্বমালসাদহ গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ও শিশিরপাড়া গ্রামের আমির মিয়ার জামাই। দীর্ঘদিন প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মরত থাকার পর গত ১ সেপ্টেম্বর দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকায় সহকারী ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন।

আদালতে প্যাডির স্বীকারোক্তি: জাহাঙ্গীর আলম হত্যার মূল আসামি ফয়সাল ওরফে প্যাডি গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার অন্য তিন আসামির চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ঢাকার খিলক্ষেপ থানার ভারপ্রাপপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল হক জানান, জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলার চার আসামিকে ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে প্যাডি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। মামলার অন্য তিন আসামি রায়হান সারোয়ার, নাজমুল হাসান ও ফাহিম হাসান খানকে চারদিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে টাকা-পয়সার লেনদেন না কী অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান শহিদুল হক। তবে প্যাডির স্বীকারোক্তর বরাত দিয়ে ওসি আরো বলেন, দুঃসম্পর্কের সূত্র ধরে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবসার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয় প্যাডি ও তার সহযোগীরা। ওই টাকা কোরবানির ঈদের আগে ফেরত দেয়ার কথা ছিলো। এ কারণে জাহাঙ্গীরকে খুন করা হয়েছে।

১৫ সেপ্টেম্বর সকালে কর্মস্থল থেকে কাওছার ঢাকার বাড্ডা এলাকায় যান। সেখান থেকেই নিঁখোজ হন তিনি। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি বাসায় না ফিরলে পরিবারের পক্ষ থেকে অফিসের মাধ্যমে থানায় অবহিত করা হয়। ঘটনার পর থেকে তার মোবাইলফোনটি বন্ধ ছিলো। শুক্রবার সকালে খিলক্ষেত এলাকার নামাপাড়ার এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় প্যাডির ভাড়া করা কক্ষ থেকে একটি স্যুটকেসের মধ্যে জাহাঙ্গীরের আলম কাওছারের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্যাডিসহ চারজনকে গ্রেফতার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।