প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং পদস্থ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা

 

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস মানে জাতির ভবিষ্যত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে হত্যা করা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নিয়ে যারা ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে তাদের কারণে প্রকৃত মেধাবীরা যে ছিটকে পড়ে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। অবাক হলেও সত্য যে, এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত সন্দেহে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন পদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের অনেকে বিক্ষোভ করেছে। একজন আইনজীবী আইনগত নোটিস দিয়েছেন।

মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে র‌্যাব। গত শুক্রবার সারাদেশে মেডিকেল কলেজসমূহের জন্য ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগেই চলতি সপ্তাহে প্রথম দফায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশের বিশেষ বাহিনী ও র‌্যাবের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ভবনে অভিযান চালায়। সেখান থেকে কমিশনের সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজসহ তিনজনকে আটক করে। আটককৃত তিনজনসহ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪২ জনের একটি চক্রকে আটক করেছে র‌্যাব। দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহকারী পরিচালকের মতো বড় পদের বা বড় মাপের কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে তা সাধারণ মানুষের বোধের বাইরে। এ দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, বিএ, এমএ তো বটেই, গত কয়েক বছর বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে বার বার। ফাঁস হয়েছে মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, চাকরির ইন্টারভিউসহ সকল প্রকার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন। আর যারাই এর সাথে জড়িত থাকুক না কেন প্রতিকার হয়নি কখনোই। ধরা পড়েনি মূল  হোতারা। ফলে দিনে দিনে এমন পর্যায় পৌঁছে গেছে যে, সবাই এক প্রকার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে এটাই স্বাভাবিক পরিণতি। ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না’ শিক্ষামন্ত্রীর এমন দাবি যে অসার তর্জন-গর্জন ছাড়া কিছুই নয় অথবা সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস ছিলো তা একেবারে প্রমাণসহ হাজির হয়েছে জনগণের মাঝে। এ চক্রটি ধরা পড়ার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় তারা এ ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন।

যারা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত তারাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত। কারণ প্রশ্ন  তৈরি, ছাপা, বণ্টন সীমিত কয়েকজন কর্মকর্তাসহ নির্দিষ্ট লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অন্য কারো পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সহজসাধ্য বিষয় নয়। এবারের ঘটনা সে কথাটাই আবার প্রমাণ করলো। একই সাথে অতীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনারও তদন্ত হওয়া দরকার; দরকার এ জাতীয় চক্রের সমূলে উৎপাটন। উচিত শিক্ষা। জাতির ভবিষ্যত নির্মাণে বর্তমানের দায়িত্বশীলদেরই দরকার অগ্রণী ভূমিকা।